কয়েক দিন ধরে রাজশাহীসহ সারাদেশে কনকনে শীত পড়ছে। সকাল ও সন্ধ্যার পর ঠান্ডা বাড়ছে। কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা পাওয়াই দুস্কর। এই অবস্থায় পূর্ণবয়স্কদের অবস্থা যেখানে জবুথবু সেখানে ভোরে কুয়াশার মধ্যে স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও করুণ। ভোরেই স্কুলে যেতে হয় বলে শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পড়েছেন বেশ বিপাকে। গত কয়েকদিন ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে রাজশাহীর কয়েকটি স্কুলে সরেজমিনে গিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের দৃশ্য চোখে পড়ে। ক্লাস শুরুর নির্ধারিত সময়ের পরেও অনেক বাচ্চাদের তাড়াহুড়ো করে স্কুলে আসতে দেখা যায়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্কুলে নিয়ে আসায় শিশু শিক্ষার্থীদের অনেককে আবার কান্না করতেও দেখা গেছে।
এ বিষয়ে একাধিক অভিভাবক বলেন, যেখানে প্রাপ্তবয়স্করাই শীতে জবুথবু অবস্থা সেখানে পাঁচ-ছয় বছরের শিশুকে ভোরে ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলে নিয়ে আসা অমানবিক। বেশিরভাগ শিশু এত শীতের মধ্যে স্কুলে যেতে চায় না।
তারা বলেন, এতো সকালে ঠান্ডার মধ্যে স্কুলে যাতায়াতের কারণে বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেহেতু শীতের মাত্রা অত্যধিক এবং এটা ক্ষণস্থায়ী। তাই প্রাথমিক স্কুলগুলো বন্ধ রাখলে বাচ্চারা একটু স্বস্তি পেত।
রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু মাহিন মান্নানী। তার মা’ লূতফোর নোস, মাহিনে ক্লাস শুরু ৮টায়। কিন্তু স্কুলে আসার জন্য ৭টার আগেই তাকে ঘুম থেকে ওঠাতে হয়। এই শীতের সকালে স্কুলে না আসতে চাইলেও একপ্রকার জোর-জবরদস্তি করেই তাকে স্কুলে নিয়ে আসি।
শীতের প্রকোপে অনেক শিক্ষার্থীদের চোখ-নাক দিয়ে পানি পড়তেও দেখা যায়। নগরীর মসজিদ মিশন একাডেমীর চতুর্থ শ্রেণির মেহতাজকে নিয়ে ৭টার আগেই স্কুলের গেটে অবস্থান করছে মা পারভিন নেসা। এ সময় মেহতাজকে শীতের কারণে কাঁপতে দেখা যায়। পারভিন নেসা বলেন, শীতের প্রকোপ না কমা পর্যন্ত স্কুলগুলো বন্ধ রাখা উচিত।
নগরীর কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে মোবাইলে জানতে চাওয়া হলে, তারা প্রায় সকলেই বলেন, এ ভোগান্তি সাময়িক সময়ের জন্য। আর স্কুল চালু বা বন্ধ রাখা বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। শিক্ষার্থীদের এত সকালে শীত উপেক্ষা করে স্কুলে আসতে বেগ পেতে হলেও প্রাকৃতিক আবহাওয়ার সঙ্গে বাচ্চাদের মানিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তারা বলেন, আমাদের দেশে যেহেতু শীতের প্রভাব জানুয়ারি মাসে বেশি থাকে। আর এটা বছরের প্রথম হওয়ায় চাইলেও স্কুল বন্ধ রাখা বা শিফট পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কারণ এ সময় ভর্তি, বই বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চলে। যদি স্কুল বন্ধ রাখা হয় তাহলে বাচ্চাদের অনেক পিছিয়ে পড়বে। তবে তারা বলেন, শীতে কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে প্রতিষ্ঠানে আসতে পারছেনা বলে আমরা জানতে পেরেছি।
এদকে, আর ঠান্ডার কারণে বাড়ছে রোগের প্রকোপ। ঠান্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাস, জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নবজাতক, শিশু ও বৃদ্ধরা। এতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এখানে শয্যার চেয়ে কয়েক রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে হাসপাতালের একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও রামেক হাসপাতালের সাথে বেসরকারী ক্লিনিকগুলোতেও বেড়েছে রোগি ভর্তির চাপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহীতে কনকনে বাতাসের কারণেই শীতের অনুভূতি হাড় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে। এতে ঘরের বাইরে জনজীবনে একধরনের স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। এ দিন ঘরের বাইরে মানুষের চলাচল তুলনামূলক অনেক কম ছিল। একান্তই প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হয়নি। এ ছাড়া যারা বাইরে বের হয়েছেন তারা মোটা গরম কাপড় শরীরে মুড়িয়ে নিয়েছেন।
শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষায় করণীয় উল্লেখ করে চিকিৎসকরা জানান, এই শীতে বাচ্চা ও বয়স্কদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজন না থাকলে বেলা ১০টার আগে বাড়ি থেকে বেড় হওয়া যাবে না। বের হলেও নাক, কান ও গলার জন্যও শীতবস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। গরম খাবার, গরম পানি খেতে হবে ও ব্যবহার করতে হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী হাসপাতালে আসছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারির এ সময়ে শীতের প্রকোপ বাড়ে। এখন শীতের প্রকোপ বেশি। আকাশে মেঘ ছিল। সেটা কেটে গেছে। এখন আর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে।