করোনা মহামারীর আতঙ্ক এখনও ম্লান হয়নি। আতঙ্ক নিয়ে দিনের পর দিন ঘরবন্দি হয়ে থাকা, মাস্ক পরে রাস্তায় বেরোনো, মানুষের থেকে দূরে থাকার সেই দিনগুলি আজও অন্ধকারের মতো মনে হয়। ২০২০-২১ সালে তো করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। বলা যায়, বিভিন্ন দেশে মৃত্যু-মিছিল দেখা দিয়েছিল।
মৃতদেহ পোড়ানোর লোকও পাওয়া যাচ্ছিল না। চিকিত্সা বিজ্ঞানীদের অধ্যাবসায়, একনিষ্ঠতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে অবশেষে কোভিড ভ্যাকসিনের হাত ধরে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাওয়া গিয়েছে। তবে আতঙ্কের প্রহর এখনও শেষ হয়নি। আবার ফিরে আসতে পারে সেই ভয়াবহ দিন! এমনই আশঙ্কা-বার্তা শোনালেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে এবার কোভিড নয়, আসন্ন মহামারীর নাম হতে পারে ডিজিস এক্স (Disease X)।
সোমবার থেকে পাঁচদিন ব্যাপী সুইত্জারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব ইকোনমিক ফোরাম (WEF)-এর বৈঠক শুরু হয়েছে। সেই বৈঠকে বিশ্ব নেতাদের আলোচনায় উঠে আসে ডিজিস এক্স-এর প্রসঙ্গ। বলা ভাল, ডিজিস এক্স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, কোভিড মহামারীর থেকে ২০ গুণ মৃত্যু হতে পারে ডিজিস এক্স-এ। তাই ডিজিস এক্স মহামারী ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন হু-র প্রধান ডা. টেড্রস আধনোম ঘেব্রিয়েসাস।
ডিজিস এক্স কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কী উন্নতি করার প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয় WEF-এর বৈঠকে। কীভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়, কোন ওষুধে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব, এমনকি নতুন কী ধরনের ভ্যাকসিন প্রয়োজন, সে বিষয়েও স্বাস্থ্য গবেষকদের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দেওয়া হবে WEF-এর বৈঠকে। সবমিলিয়ে, আরও একটি মহামারী ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দেবেন হু প্রধান থেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ডিজিজ 'এক্স' কী?
হু-র তথ্য অনুসারে, ডিজিজ এক্স হল আন্তর্জাতিক এপিডেমিক, যা অজানা প্য়াথোজেন থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই প্যাথোজেন কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া অথবা ছত্রাক হতে পারে। এই প্যাথোজেন কোটি কোটি মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে। এই প্যাথোজেন সম্পর্কে বিশদ তথ্য এখনও গবেষকদের কাছেও নেই। এটা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। দ্রুত এই প্যাথোজেন সম্পর্কে না জানা গেলে এবং প্রস্তুতি না নিলে বিশ্ব কোভিডের থেকেও বড় মহামারীর সাক্ষী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হু বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সবথেকে উদ্বেগের যে রোগের তালিকা প্রকাশ করেছিল, তার শীর্ষে ছিল ডিজিজ এক্স। এরপরে রয়েছে ইবোলা ভাইরাস, মার্স, সার্স, নিপা, জিকার মতো অতি সংক্রামক রোগ, যার মৃত্যুহারও অনেক বেশি। ২০১৪-য় ইবোলা ভাইরাস বাড়বাড়ন্তের সময় থেকেই ডিজিজ এক্স নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন হু বিশেষজ্ঞরা।