ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় রাজশাহীতে জেঁকে বসেছে হাড় কাঁপানো শীত। এতে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। টানা দুইদিন শৈতপ্রবাহের পর তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও কমেনি শীতের তীব্রতা।
রাজশাহীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, সোমবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দিন রোববার ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এছাড়াও গত শনিবার ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এদিকে, রোববার মধ্যরাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন, বস্তি ও রাস্তা পাশে থাকা ছিন্নমূল শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এ সময় তিনি অসহায় ছিন্নমূল মানুষের শরীরে কম্বল জড়িয়ে দেন। জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে অনেক ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষ তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরেন। এ সময় জেলা প্রশাসক তাদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের গায়ে গরমের উষ্ণতা দিতে কম্বল জড়িয়ে দেন।
কম্বল পেয়ে ৭২ বছর বয়সী অন্ধ বৃদ্ধা ভিক্ষুক তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রচন্ড শীতের ঠ্যালায় খুব কষ্টে আছিনু। তাও একটা কম্বলও কেউ দেয়নি। শ্যাষ রাতে আইজ ডিসি স্যারের হাতত থ্যাকে একটা কম্বল পাইয়্যাছি। এটাতেই হামার শীত চলি যাবে।’
নগরীর শিরোইল কলোনী বস্তির শরিফা বেগম বলেন, ‘কুনো মতে ছোট্ট একটা বেড়ার ঘরে থাকি। পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। হামার চেয়ে অসহায় মানুষ এই বস্তিতে আর কেউ নেই। কয়দিন থেকে হাড় কাঁপানো শীতে খুব কষ্টে আছিনু। কিন্তু একটা কম্বল পাইছি। এখন আর শীতের রাতে ঘুমাতে কষ্ট হবে না।’
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, ‘রাজশাহীতে হঠাৎ করেই ঘন কুয়াশা আর কনকনে হাড় কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। এই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে গরমের উষ্ণতা দিতে মধ্য রাতে ঘুরে ঘুরে খেটে খাওয়া দিন মজুর ও ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই রাজশাহী জেলায় প্রায় ৬৪ হাজার শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এসব শীতার্ত অসহায় মানুষ যাতে শীতে কষ্ট না করে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী জানান, এ বছর রাজশাহী জেলায় ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে জেলার ৯টি উপজেলায় শীতার্তদের মাঝে ৬৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও গত কয়েকদিন ধরে রাতে জেলা প্রশাসক নিজেই তার গাড়ি বহরে কম্বল নিয়ে রেল ষ্টেশন, বস্তিবাসী ও রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন।
মধ্য রাতে কম্বল বিতরণকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) শামসুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক জামান, মাহফুজুর রহমান, সাজিদ তানভী শোভন, অয়ন ফারহান শামস প্রমূখ।