রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে গত দুটি শিক্ষাবর্ষের ন্যায় ২০২৩-২৪ সেশনেও বেশ কয়েকটি আসন কমিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক/স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে বিভাগসমূহের আসন সংখ্যার প্রকাশিত তালিকা থেকে বিষয়টির নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে।
তালিকা থেকে জানা যায়, কিছু বিভাগে আসন সংখ্যা কমিয়েছে আবার কিছু বিভাগে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউটে সর্বমোট ২৬টি আসন কমানো হয়েছে। ফলে গত তিন বছরে ২৮৪টি আসন সংখ্যা কমিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রকাশিত তালিকাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৫টি, বিজ্ঞান অনুষদের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ১০টি ও গণিত বিভাগে ১০টি, প্রকৌশল অনুষদের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৫টি এবং ইনস্টিটিউড অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (আইবিএ) ১০টি আসন কমানো হয়েছে।
অন্যদিকে বিজনেস স্ট্যাডিজ অনুষদের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ৫টি, জীববিজ্ঞান অনুষদের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ৫টি, কৃষি অনুষদের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগে ৪টি আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
কোটা বাদে নতুন শিক্ষাবর্ষে রাবির ৫৯টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন ৩৯০৪ জন শিক্ষার্থী। নতুন শিক্ষাবর্ষে ২৬টি আসন কমার ফলে তিন শিক্ষাবর্ষ মিলিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন কমানো হয়েছে সর্বমোট ২৮৪টি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫৯টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউটে স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। বিগত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে নয়টি বিভাগ, আসন সংখ্যা ৩৬০০ থেকে বেড়ে হয়েছিল ৪১৭৮টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিবেশের উন্নতির স্বার্থে বিভিন্ন অনুষদের বেশ কয়েকটি বিভাগ আসন কমিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। যা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হয়। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সর্বমোট ১৬৮টি আসন কমিয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরের বছর ৯০টি আসন ও এ বছর ২৬টি আসন কমিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে নতুন প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদে ৮৮৬টি, আইন অনুষদে ১৬০টি, বিজ্ঞান অনুষদে ৬২০টি, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে ৪৭৫টি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৬৫৬টি, কৃষি অনুষদে ১১৬টি, প্রকৌশল অনুষদে ২৫১টি, চারুকলা অনুষদে ১২০টি, জীববিজ্ঞান অনুষদে ৩০০টি, ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে ১৩০টি, ফিশারিজ অনুষদে ৫০টি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদে ৫০টি, ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-তে ৪০টি এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে ৫০টি আসন রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ক্লাসরুমে একজন শিক্ষার্থীর যে সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা সেগুলো তারা পাচ্ছে না। তাছাড়া ব্যাবহারিক বিষয়গুলোর উপর গবেষণাগারের যে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা তাও একজন শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এর আগে পরিকল্পিতভাবে আসন সংখ্যা বৃদ্ধিই করা হয়েছে কিন্তু শিক্ষার্থীদের কোনো সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর দেওয়া হয়নি। কিন্তু এটা তো হতে পারে না। নিয়মানুযায়ী একটি ক্লাসরুমে ৪৫ জনের অধিক শিক্ষার্থী থাকার কথা না। কিন্তু বর্তমানে তার বিপরীত চিত্র আমরা দেখতে পাই। আমরা একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ে আদর্শ ক্লাস রুম গড়তে চাই। তারই লক্ষ্যে বিভাগগুলোর প্রধানের সাথে কথা বলে আমরা আসন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।