দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ভোট বর্জন ঘোষণার মধ্যে দিয়েই দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজশাহীর ৬টি আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। কোথাও বড় কোন সহিংসতার খবর পওয়া যায়নি। রোববার সকাল ৮টা থেকে রাজশাহীর ৭৭০টি কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে এটি চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। তবে কেন্দ্রগুলোর কোথাও দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েনি। ভোটে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজশাহীর ৬টি আসনে প্রার্থী রয়েছেন ৪১জন।
সকালে ভোট শুরুর পর থেকেই দু’একটি কেন্দ্র ছাড়া কোথাও ভোটারের লাইন হতে দেখা যায়নি। রাজশাহী-২ (সদর) আসনের নওদাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষদের একটি কক্ষে ভোট দেন সিহাব উদ্দিন। বেরিয়ে এসে তিনি জানান, ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিত একেবারেই কম। এভাড়া তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় কেন্দ্রের আশপাশেও কোন সমস্যা নাই।
এদিকে, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের নবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রটি দখল করার অভিযোগ উঠেছিল ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। সকাল থেকে এই কেন্দ্রে ভোটারদের ঢুকতে দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েশা আক্তার ডালিয়া। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম পারভেজ বাবু। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুসারী বলে জানা গেছে। নবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গোদাগাড়ীর মোহনপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।
এছাড়াও বাসুদেবপুর ইউনিয়নের কাপাসিয়াপাড়া বিদ্যালয়টি দখল করে জোর করে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ানোর অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, এই কেন্দ্র দুটি ফারুক চৌধুরীর লোকজন ঘিরে রেখেছে। নৌকা প্রতীক বাদে অন্য কারও পক্ষে ভোট দিতে দিচ্ছে না। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তার অনুসারীরা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পেয়ে ওই কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। আমাদের যাওয়া টের পেয়ে তারা পালিয়ে গেছে। সেখানে একটি ফোর্স রেখে এসেছি। এখন স্বাভাবিক আছে। তিনি আরও বলেন, কাপাসিয়াপাড়ায় ফোর্স পাঠানো হয়েছে। সেখানে কারা বাধা সৃষ্টি করছে তাদের আটক করার জন্যও বলা হয়েছে।
এছাড়াও রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের দুর্গাপুর পৌরসভার এলাকার রৈপাড়া কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক চাইনিজ কুড়াল হতে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটারদের ভয়ভীতিপ্রদর্শন ও হুমকি দিয়ে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হলে কেন্দ্র দখলকারী নৌকার সমর্থকরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। রোববার দুপরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে বর্তমান ওই কেন্দ্রটি আইনশৃংখলা রক্ষাকারীর বাহিনীদের তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে নৌকার সমর্থক ভোটারদের বাঁধা ও হুমকি প্রদান করেন পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ। পরে পুলিশ, বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে (নৌকা) ভোট করছেন আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান। ভোট শুরুর পর থেকে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে রাখা ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেলে সংগে সংগেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি, র্যাব ও বিজিবি এবং থাকছে আনসার সদস্যরা। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে আছে সশস্ত্র বাহিনী।