জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৩ দিনের জন্য মাঠে নামছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। আগামী ২৯ ডিসেম্বর তারা মাঠে নামবেন। ভোটগ্রহণের পর ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করবেন তারা। এ নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নামানো হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুসারে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে টহল দেবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় এলাকাভেদে ১৫-১৭ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের সুবিধার্থে আগামী ৫ জানুয়ারি মধ্যরাতে মোটরসাইকেল এবং ৬ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে গণপরিবহন বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জারি করা পরিপত্র সব রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই সংশ্লিষ্ট সবার নিরপেক্ষতা জনগণের কাছে দৃশ্যমান হবে।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, এবার আনসার সদস্য পাঁচ লাখ ১৬ হাজার জন, পুলিশ ও র্যাব এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড দুই হাজার ৩৫০ জন ও বিজিবি ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন থাকবেন। ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের ভোটকেন্দ্রগুলোতে গত নির্বাচনের তুলনায় এবার পুলিশের অস্ত্রধারী সদস্য একজন বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে দুজন অস্ত্রধারী পুলিশসহ মোট ১৫-১৬ জন সদস্য মোতায়েনের জন্য পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ওই সংখ্যা হবে ১৬-১৭ জন। পার্বত্য দুর্গম এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে একই সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ নির্বাচনে ২৫টি জেলার ৭২টি উপজেলাকে দুর্গম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতরে অবস্থিত সাধারণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তারা চাইলে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটগ্রহণের দুদিন আগ থেকে পাঁচ দিনের জন্য মোতায়েন থাকবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পাঁচ দিনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ আর্মড পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে মোতায়েন করা হবে। আনসার ব্যাটালিয়ন পুলিশের সহযোগী ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হচ্ছে। তারা নির্বাচনি মাঠে ১৩ দিন অবস্থান করবেন। তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশে কাজ করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও খুলনার ৪৩টি উপকূলীয় ইউনিয়নে কোস্টগার্ড মোতায়েন হবে।
আগের নির্বাচনের মতো এবারও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নামানো হচ্ছে। তারা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও থানার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য অভিযান পরিচালনা করবেন সেনা সদস্যরা। রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী সেনা সদস্যরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোটগণনা কক্ষে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
ভোটের দিনের নিরাপত্তা : ভোটাররা নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারেন-সেই নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে পরিপত্রে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে নিবিড় টহল দিতে বলা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রয়োজনে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা যাবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা নির্বাচনি সামগ্রী নিয়ে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া এবং ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছানোর পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে এ পরিপত্রে।
অন্যান্য নির্দেশনা : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে সাহসী ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের যাতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ না দেওয়া হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। ব্যালট পেপার স্থানীয় ট্রেজারিতে ডাবল লকে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ব্যালট পেপার মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে নিবন্ধিত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যৌথসভা আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।