এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে হরতাল-অবরোধ। দুই দিন বিরতি দিয়ে আবারও রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো।
হরতাল-অবরোধে প্রতিদিনই গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে স্কুলগুলোতে শুরু হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা।
একদিকে খুদে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা, অন্যদিকে রাজনৈতিক সহিংসতা। আর তাতে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পরীক্ষায় বসতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার আগেই নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু হরতাল-অবরোধে বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছে পরীক্ষা কার্যক্রম।
অবরোধের মধ্যে মাধ্যমিকে নতুন কারিকুলামে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর)। রাজধানীর নামী প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ তাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এই পরীক্ষা শুরু করতে পারেনি।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, অবরোধের মধ্যে আজকে ষষ্ঠ-সপ্তমের সামষ্টিক মূল্যায়ন না নিয়ে একদিন পিছিয়ে শুক্রবার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা বলেছি, আমরা শিক্ষকরা নিজেরাই কষ্ট করি, বাচ্চাদের রিস্কের মধ্যে ফেলে না দেই। কারণ, প্রতিদিনই বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক উইংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে যে নির্দেশনা পেয়েছি, সে অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমরা আগেই নির্দেশনা দিয়েছি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে।
ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়ন গত ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মাস্টার ট্রেনিংয়ে জন্য তা পিছিয়ে ৯-১৮ নভেম্বর করা হয়েছে। অন্য শ্রেণিগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা ১৪ থেকে ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
আগামী ১১ ও ১২ নভেম্বর আবারও অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আবার আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে এবং ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আরও কঠোর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসতে পারে, এ অবস্থায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক বেলাল হোসাইন বলেন, ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে আমাদের কাছে যে নির্দেশনা আসছে, সেগুলো মাঠ পর্যায়ে দিচ্ছি। ভবিষ্যতেও তেমনি করা হবে।
রাজধানীতে ২৫-২৬ হাজার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিয়ে চরম উদ্বেগের কথা জানিয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ষষ্ঠ-সপ্তমের সামষ্টিক মূল্যায়ন একদিন পিছিয়ে শুক্রবার নেবে।
ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা আমাদের কাছে উদ্বেগের কথা জানাচ্ছে। কারণ প্রতিদিনই ঢাকায় বাসে-গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ২৫-২৬ হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করছে। পরীক্ষার সময়টাতেই কেন কর্মসূচি দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকে কেন পুঁজি করে হরতাল-অবরোধ দিতে হবে? যারা কর্মসূচি দিচ্ছে তাদের বাচ্চারাও তো আছে। আমার মনে হয় তারা পরীক্ষার সময়টা ছাড় দিলে অনেক সমর্থন পেত।
আগামীতে আরও হরতাল-অবরোধ দেওয়া হবে, তখন কীভাবে পরীক্ষায় অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন অবস্থা বুঝে ব্যস্থা নেব। বাচ্চাদের বলেছি প্রস্তুত থাকো।
ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন, একদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বলা হচ্ছে রুটিন মেইনটেন করতে অন্যদিকে হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সুজন বলেন, অবরোধের মধ্যে স্কুলে সন্তানদের পাঠাতে আমরা অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন থাকি। আজকে আবারও নতুন করে অবরোধ ডাকা হলো। এ অবস্থায় অভিভাবকেরা আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আমরা অভিভাবকেরা মিটিংয়ে বসে পরীক্ষা পেছানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাব।
হরতাল-অবরোধে রাজধানীর নামী আরেক প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই সময়ে হরতাল-অবোরোধে আমরা অভিভাবক মহল এবং শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলো নেবে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে সবারই নজর দেওয়া প্রয়োজন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা পেয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে।
হরতাল-অবরোধে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক বেলাল হোসাইন বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি। উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন আসেনি। আমি গত সপ্তাহে কুমিল্লাতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দেখেছি সেখানে শতভাগ উপস্থিতি। আজকে ষষ্ঠ-সপ্তমের মূল্যায়ন শুরু হলো, আজকেও রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভিজিট করেছি। সেখানে উপস্থিতি শতভাগ আছে।
অবরোধের কারণে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোও সশরীরে ক্লাস নেওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনালসহ ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ অবরোধের শুরুর দিন থেকে স্কুল বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস চলছে।