২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:৫০:৫৯ পূর্বাহ্ন


ইসলামে যে কারণে মদ জুয়া হারাম
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২৩
ইসলামে যে কারণে মদ জুয়া হারাম


নেশা মানুষকে অন্যায় কাজে প্ররোচিত করে। নেশাগ্রস্থ মানুষের জন্য পরিবার ধ্বংস হয়। সমাজ নষ্ট হয়। মানুষের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। মদের নেশা, জুয়ার নেশায় মত্ত মানুষ সমাজকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে। তাই নেশা ও জুয়াকে ইসলাম হারাম বলে ঘোষণা করেছে।

নেশার জগতে পা বাড়ালে মানুষ ক্ষয়ে-ক্ষয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। মাদকাসক্তি মানুষকে জ্ঞানশূণ্য করে দেয়। সামাজিক বন্ধন ও সম্মানের কোনো চিন্তাই তার থাকে না। নেশার অনিষ্ট থেকে উম্মতকে বাঁচাতে প্রিয় নবি সা. পর্যায়ক্রমে মদ পানকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। নেশার অনিষ্ট সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করেছেন।  রসুল সা. বলেন, ‘(কখনো) তুমি মদ পান করো না। কারণ, তা সকল অকল্যাণ ও অঘটনের চাবিকাঠি।’ (ইবনে মাজাহ ৩৪৩৪)

মদ হারাম হওয়ার আয়াত
 
কোরআন ও হাদিসে মাদ জুয়াকে সমানভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবী সা.কে বলেন, 
 
‘তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এ দুটির মাঝে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।’ (সুরা: বাকারা ২১৯)
 
কোরআনের এ আয়াতে বলা হয়েছে, মদ ও জুয়াতে যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে কিছু উপকারিতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু দু’টির মাধ্যমেই অনেক বড় বড় পাপের পথ উন্মুক্ত হয়, যা এর উপকারিতার তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকর।
 
ইসলামের দৃষ্টিতে মদ-জুয়া কবিরা গুনাহ। হারাম। আদম সন্তানের শয়তান কখনো ভাল চায় না। সে চায় মানুষ তার স্রষ্টাকে ভুলে থাকুক। সমাজে মন্দ আর ক্ষতিকর কাজের ব্যাপকতা লাভ করুক। সম্ভাব্য জান্নাতিকে জাহান্নামি আর সমাজের শান্তিকে অশান্তিতে পরিণত করার জন্য শয়তান জাল বুনে। সে জাল ছড়িয়ে দেয় সমাজে। মদ ও জুয়া মুমিন বান্দাকে আটকে ফেলার জন্য শয়তানের ছড়ানো জাল। এর মধ্যে যে বান্দা পড়ে যায়, তাকে জাহান্নামি করেই ছাড়ে।
 
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘‌‌‌‍‍‍‍‍‍হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া প্রতিমা ও লটারি এ সবই শয়তানের কাজ। তোমরা তা থেকে বিরত থাক। আশা করা যায় , তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে। নিশ্চয় শয়তান, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়। আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। তাই তোমরা এসব জিনিস থেকে বিরত থাকবে কি? (সুরা: মায়েদা ৯০-৯১)
 
মাদকতা নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়ে রসুল সা. বলেছেন, ‘হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত রসুল সা. বলেন, প্রত্যেক নেশাকর বস্তু হারাম। (মেশকাত ৩৬৩৯) হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত রসুল সা. বলেন, প্রত্যেক পানীয় যা নেশাগ্রস্ত করে তা হারাম। (মেশকাত ৩৬৩৭)
 
মদ ক্রয়-বিক্রয়, পান-বহন মদের ব্যবসার অনুমোদন সবই ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। মদ্যশালার বৈধতা রেখে মাদকতামুক্ত সুস্থ সমাজ গড়া সম্ভব নয়। মাদকতায় শুধু শারীরিক ও সামাজিক ক্ষতিই নয় পরকালের সুখময় জীবনকেও নরকে পরিণত করে। রসুল সা. এর বদদোয়া রয়েছে মাদকতায় জড়িতদের প্রতি। যারা এর অনুমোদন করে তাদের প্রতি। যারা সরবরাহ করে তাদের প্রতি।
 
হযরত আনাস রা. বলেন, রসুল সা. মদের সাথে সম্পৃক্ত দশ ব্যক্তিকে লানত করেছেন। ১. মদ প্রস্তুতকরী। ২. মদের ফরমায়েশ দানকারী। ৩. মদ পানকারী। ৪. মদ বহনকারী। ৫. যার কাছে মদ নিয়ে যাওয়া হয় সে ব্যক্তি। ৬. যে মদ পান করায়। ৭. মদ বিক্রেতা। ৮. মদের মূল্য ভোগকারী। ৯. মদ ক্রয়কারী। ১০. যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (মেশকাত ২৭৭৬)
 
মাদকতার বিরুদ্ধে রসুলের সা. এর অবস্থান ছিল কঠোর। হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত রসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি মদপান করে। তাকে বেত্রাঘাত করো। যদি চতুর্থবার পান করে তবে তাকে হত্যা করো। তিনি বলেন পরে অনুরূপ এক ব্যক্তিকে তার নিকট আনা হলে তিনি তাকে প্রহার করেন কিন্তু হত্যা করেননি। (মেশকাত ৩৬১৭)
 
জুয়াকে আরবিতে ‘মায়সির’ ও ‘কিমার’ বলা হয়। মায়সির ও কিমার এমন খেলাকে বলা হয়, যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে। যার মধ্যে লাভ বা ক্ষতি কোনোটাই স্পষ্ট নয়। জুয়ার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। নবীজি সা.-এর আগমনের সময় তৎকালীন মক্কায় নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। বর্তমানে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার ক্ষেত্রে আরও বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে; এগুলোর সবই হারাম। অনলাইন জুয়া আর ক্যাসিনোর সয়লাব এখন। মোবাইলে মোবাইলে জুয়ার আসর। ক্রিপটোকারেন্সির জুয়ায় মত্ত এখন আধুনিক যুবকরা। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতন না হলে সামনের দিন অনেক ভয়াবহ হবে।
 
রসুল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি অপরকে জুয়া খেলার প্রতি আহ্বান করবে, তার উচিত কিছু সদকা করে দেওয়া।’ হাদিসে হযরত রসুলুল্লাহ সা. শুধু জুয়াকেই হারাম করেননি, বরং জুয়ার ইচ্ছা প্রকাশকেও গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন। যে ব্যক্তি অপরকে জুয়া খেলার জন্য ডাকবে তাকেও গুনাহের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কিছু সদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ তাহলে জুয়া খেললে কী পরিণতি হতে পারে সে সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত।
 
ইসলামে সব ধরনের জুয়াবাজি অবৈধ। এর থেকে প্রাপ্ত সম্পদ হারাম। আর হারাম সম্পদ ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহ তাআলার দরবারে তা কবুল হয় না। তাই মুসলমান হিসেবে সব ধরনের জুয়াবাজি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
 
হযরত ওমর রা.-এর শেষ যুগে মদ পান করলে তিনি ৪০ বেত্রাঘাত করতেন। কিন্তু যখন মদপান বৃদ্ধি পেতে লাগলো তখন তিনি ৮০ বেত্রাঘাত করতেন। (মেশকাত-৩৬১৬) দুনিয়ায় যে আল্লাহর বিধান মেনে নেশা আর জুয়া থেকে বিরত থাকবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের জন্য জান্নাতে শরাবের ব্যবস্থা করবেন। দুনিয়ায় মদ পান হারাম। নিষিদ্ধ। কিন্তু জান্নাতে মদ সুপেয় পানীয়। যারা দুনিয়ায় মদ পান করবে তারা আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত রসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করলো অথচ তওবা করলো না। আখেরাতে সে থেকে বঞ্চিত হবে। (মুসলিম ২০০৩)
 
ইসলামে মদ পানের শাস্তি
 
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা.বলেন রসুল সা. বলেছেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য ওয়াদাবদ্ধ যে ব্যক্তি নেশাজাতীয় বস্তু পান করে তাকে ‘তিনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। আরজ হলো হে আল্লাহর রসুল সেটা কী? তিনি বললেন, জাহান্নামিদের দেহের ঘাম অথবা দেহনিঃসৃত রক্ত-পুঁজ। (মেশকাত ৩৬৩৯)
 
কারোর ব্যাপারে মদ অথবা মাদকদ্রব্য পান কিংবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। সে যতবারই পান করে ধরা পড়বে ততবারই তার উপর উক্ত দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে। তবে তাকে এ জন্য কখনোই হত্যা করা হবে না। ’উলামাদের ঐকমত্যে প্রমাণিত এ শাস্তি।

রসুল সা. বলেন, ‘যখন কেউ (কোন নেশাকর দ্রব্য সেবন করে) নেশাগ্রস্ত হয় অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন কেউ মদ পান করে তখন তোমরা তাকে বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুর্থবার বললেন আবারো নেশাগ্রস্ত হলে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে।’ (আবু দাউদ ৪৪৮২, তিরমিজি ১৪৪৪, ইব্নু মাজাহ ২৬২০, নাসায়ি ৫৬৬১, আহমাদ ৪/৯৬)