২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১১:০০:৫৪ পূর্বাহ্ন


ইহ ও পরকালে সফলতার নিশ্চয়তা
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১০-২০২৩
ইহ ও পরকালে সফলতার নিশ্চয়তা ইহ ও পরকালে সফলতার নিশ্চয়তা


(গত দিনের পর) একটি ছোট পরিবার। কিন্তু সেই পরিবারও আজ সংকুচিত হচ্ছে। আমি নিজের জীবনেই দেখতে পেয়েছি যে, পরিবার দিন দিন ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হয়েছে। আগের দিনের চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই, ফুফাতো ভাই ও মামাতো ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। যখন মানবতার সম্পর্ক ছিল তখন পুরো ভ্রাতৃত্বের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিল। গ্রামের প্রতিটি শিশুকে নিজের শিশু বলে মনে হতো এবং প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজের ভাই বলে গণ্য করা হতো। এরপর যখন বস্তুবাদ মানুষের মধ্যে চেপে বসেছে তখন এমন দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে যে, যদি এক মহল্লার কোন শিশু অপর মহল্লার কোন শিশুকে আঘাত করেছে, তাহলে অপর মহল্লার লোকেরা রুষ্ট হয়ে গিয়েছে। তারা ক্রোধান্বিত হয়ে বলেছে, আমাদের মহল্লার বাচ্চাকে প্রহার করার সাহস সেই মহল্লার শিশু কোথায় পেল? কিভাবে সে এমন কাজ করতে পারল? আমাদের মহল্লার শিশুর দিকে চোখ উঠিয়ে দেখার দুঃসাহস সে কোথায় পেল? এরপর এই মহল্লার লোকেরা সেই মহল্লার লোকদের সঙ্গে জার্মান ও ইংরেজদের লড়াইয়ের মত সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হল! উভয় মহল্লায় তুমুল সংঘর্ষ হলো।

প্রথমে এমন সংঘর্ষ বংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রথমে বংশের মধ্যে লড়াই হল। আপন মামাতো ভাইদের মধ্যে লড়াই হল। আপন খালাতো ভাইদের মধ্যে লড়াই হলো। আপন ফুফাতো ভাইদের মধ্যে লড়াই হল। মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, ফুফাতো ভাই ও চাচাত ভাইদের মধ্যে পরস্পরে লড়াই হল। এভাবে লড়াই শুরু হলো। এরপর এমন একটি সময় এলো, ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই হল। মায়ের পেটের ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের লড়াই হল।

আমরা এবং আপনারা যে সময় অবস্থান করছি এ সময়টি হলো সন্তানদের সঙ্গে লড়াই করার সময়! স্বার্থের দর্শন অন্ততঃ এটাই বলে। ব্যক্তিস্বার্থের পূজা যদি এভাবেই চলতে থাকে, জীবনের সফর যদি এভাবেই চলমান থাকে, তাহলে আপনারা দেখতে পাবেন পিতা-পুত্রের মধ্যেও লড়াই হচ্ছে। পিতা পুত্রের হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে খাবে। দুর্ভিক্ষের সময় এমন ঘটনাও দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে, নিজের সন্তানকে মা-বাবা ভুনা করে খেয়ে নিয়েছে! বিক্রয় করে খেয়েছে। এটা হল অজ্ঞতা ও জাহেলিয়াতের চূড়ান্ত পর্যায়! যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে এমন সময় আসবে যে, সন্তানের মুখ হতে মানুষ ছিনিয়ে খাবে। স্বার্থ পূজার অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। উদর পূজার দরুন সম্পর্কের অবনতি ঘটতে ঘটতে এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে, নিজের সন্তানের সঙ্গেও স্বার্থের হিসাব-নিকাশ চলছে। এ অবস্থাও এক সময় শেষ হয়ে যাবে। সন্তানও থাকবে না। এরপর নিজের সঙ্গে লড়াই করা হবে। নিজের সঙ্গে স্বার্থোদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। তখন হাত হাত কে সাহায্য করতে চাইবে না। গতকাল আমরা জামিয়া ইসলামিয়ায় দেখতে পেয়েছি যে, শিশুরা মুখের সাহায্যে পয়সা উঠিয়ে ক্রীড়া করেছে। স্বার্থ পূজা এভাবে চলতে থাকলে হাত হাত কে সাহায্য করতে চাইবে না। হাত মুখকে লক্ষ্য করে বলবে, খাবার তুমি গ্রহণ করবে। আহার করার স্বাদ তুমি ভোগ করবে।

অতএব, আমি কেন তোমার কাছে খাবার এনে দেব? জমিনের উপর শয়ন করে মুখ দিয়ে নিজে নিজে খেয়ে নাও! পয়সা উঠানোর পর জামিয়া ইসলামিয়ার শিশু ছাত্ররা পালিয়ে গিয়েছে। এটা ছিল তাদের আনন্দ বিনোদন। তাদের এই ক্রীড়ার মত উপহাস সাধারণ মানুষের মধ্যেও পরিলক্ষিত হবে। এসব বাচ্চা যেভাবে খেলা দেখিয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে সাধারণ মানুষও এমনভাবে স্বার্থের খেলায় অবতীর্ণ হবে। হাত মুখকে সাহায্য করবে না। পা বলবে : আমি কেন অগ্রসর হয়ে তোমাকে খাবার খাওয়াবো? পেটের উপর ভর করে তুমি খাবারের কাছে যাও। খাবার তো তুমি খাবে। স্বাদ তুমি উপভোগ করবে। সুতরাং কষ্টটাও তুমিই করো। আমি কেন কষ্ট করে ক্লান্ত হবো? সাপ যেমন পেটের উপর ভর করে চলে খেতে যায় ঠিক তেমনিভাবে তুমিও খেতে চাইলে পেটের উপর ভর করে খাবারের কাছে যাও! স্বার্থের দর্শন এমনটাই বলে। এই অভিশপ্ত বস্তুবাদ ও স্বার্থবাদিতা হতে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ব্যক্তিস্বার্থ, বস্তুবাদ ও স্বার্থবাদিতার দরুন পৃথিবীর অবস্থা কেমন হয়? জাহান্নামের চেয়েও হেয়তর ও কষ্টকর হয়ে যায়। কেউ কারও চিন্তা করে না। কেবল নিজে এগিয়ে যেতে চায়। মনে করুন, ইঁদুর, বানর ও বলদের মতো এদিকে-সেদিকে মুখ মারতে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে কোন কাজ হবে না। কোনো সমস্যার সমাধান ঘটবে না। সুবিচার ও অবিচার শব্দের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। কেউ কারো অধিকার স্বীকার করবে না। ত্যাগ, কুরবানী ও পরার্থপরতা দিন দিন এক প্রাচীন উপাখ্যানে পরিণত হবে। এক অতীত দাস্তানে পরিণত হবে। কোথায় সুবিচার আর কোথায় অবিচার? কোথায় ত্যাগ-তিতিক্ষা?

আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বস্তুবাদ, স্বার্থবাদ ও আত্মকেন্দ্রিকতার বিপরীতে এক নতুন জীবনবিধান দান করেছেন। তিনি আমাদেরকে জীবন-যাপন করার পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। এটা আবার কোন ধরনের জীবনযাপন যে, কেবল পানাহার ও ভোগবিলাস করা হবে? স্বার্থ চিন্তা করা হবে? আত্মকেন্দ্রিকতা অবলম্বন করা হবে? এটা কোন জীবন নয়। এমন জীবনের উপর অভিশাপ বর্ষিত হোক। জন্তু-জানোয়ারের জীবনের উপর অভিসম্পাত। বকরির জীবনের উপর অভিশাপ। কিন্তু প্রকৃত মানুষের জীবনের উপর আল্লাহ তাআলার করুণাধারা বর্ষিত হোক। সে কেমন মানুষ যার অন্তরে মানুষের প্রতি দরদ নেই? সমবেদনা ও ব্যথা নেই? কেবল নিজের স্বার্থের চিন্তায় ব্যস্ত থাকে? আপন সন্তানকে আহার করাবার চিন্তায় বিভোর থাকে? আজকের পৃথিবীর অবস্থা এমন যে, অন্য কারো পেট ভরছে কি না এটা দেখতে দ্বিতীয়জন প্রস্তুত নয়। ভাষান্তর : আবদুল কাইয়ুম শেখ।