সুরা মুজ্জাম্মিল কোরআনের ৭৩তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরাটির আয়াত ২০টি, রুকু বা অনুচ্ছেদ ২টি। সুরার প্রথম আয়াতে রাসুলকে (সা.) ‘মুজ্জাম্মিল’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এ শব্দটিকেই সুরার নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মুজ্জাম্মিল অর্থ চাদর বা বস্ত্রাবৃত ব্যক্তি। যখন এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয় তখন নবিজি (সা.) চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। আল্লাহ তাকে ডেকে বলেছেন, এখন চাদর ছেড়ে ওঠো এবং রাতের নামাজ বা তাহাজ্জুদের নামায পড়ো। বলা হয়, এই নির্দেশের ভিত্তিতে তাহাজ্জুদের নামাজ নবিজির (সা.) ওপর ওয়াজিব ছিল।
সুরা মুজ্জাম্মিলের ১-৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
(১)
یٰۤاَیُّہَا الۡمُزَّمِّلُ
ইয়াআইয়ুহাল মুঝঝাম্মিল।
হে চাদরাবৃত!
(২)
قُمِ الَّیۡلَ اِلَّا قَلِیۡلًا
কুমিল্লাইলা ইল্লা কালীলা।
রাতের কিছু অংশ ছাড়া বাকি রাত (ইবাদতের জন্য) দাঁড়িয়ে যাও,
(৩)
نِّصۡفَہٗۤ اَوِ انۡقُصۡ مِنۡہُ قَلِیۡلًا
নিসফাহূ আওয়ি-নকুস মিনহু কালীলা।
রাতের অর্ধাংশ বা অর্ধাংশ থেকে কিছু কমাও।
(৪)
اَوۡ زِدۡ عَلَیۡہِ وَرَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِیۡلًا
আও ঝিদ আলাইহি ওয়া রাত্তিলিল কুরআনা তারতীলা ।
বা তা থেকে কিছু বাড়িয়ে নাও এবং ধীরস্থিরভাবে স্পষ্টরূপে কোরআন তিলাওয়াত করো।
(৫)
اِنَّا سَنُلۡقِیۡ عَلَیۡکَ قَوۡلًا ثَقِیۡلًا
ইন্না সানুলকী আলাইকা কাওলান সাকীলা।
আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করছি এক গুরুভার বাণী।
(৬)
اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ ہِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّاَقۡوَمُ قِیۡلًا
ইন্না নাশিআতা-ল্লাইলি হিয়া আশাদ্দু ওয়াতআওঁ ওয়া আকওয়ামু কীলা।
নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী
(৭)
اِنَّ لَکَ فِی النَّہَارِ سَبۡحًا طَوِیۡلًا
ইন্না লাকা ফিন্নাহারি সাবহান তাওয়িলা।
দিনের বেলা তো তোমার থাকে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা।
(৮)
وَاذۡکُرِ اسۡمَ رَبِّکَ وَتَبَتَّلۡ اِلَیۡہِ تَبۡتِیۡلًا
ওয়াযকুরি-সমা রাব্বিকা ওয়া তাবাত্তাল ইলাইহি তাবতীলা।
আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তার প্রতি নিমগ্ন হও।
(৯)
رَبُّ الۡمَشۡرِقِ وَالۡمَغۡرِبِ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ فَاتَّخِذۡہُ وَکِیۡلًا
রাব্বুল-মাশরিকি ওয়াল-মাগরিবি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া ফাত্তাখিযহু ওয়াকীলা।
তিনি উদয়াচল ও অস্তাচলের মালিক। তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। সুতরাং তাকেই কর্মবিধায়করূপে গ্রহণ করো।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই
১. রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করা, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আল্লাহর নবি, তার প্রিয় ও নেক বান্দারা এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন।
২. কোরআন পাঠ করতে হবে ধীরেসুস্থে ও স্পষ্টভাবে, বুঝে ও চিন্তাভাবনা করে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। তাড়াহুড়া করে অনেক বেশি তিলাওয়াত করার চেয়ে বুঝে ও চিন্তাভাবনা করে অল্প তেলাওয়াত করা উত্তম।
৩. রাতের নফল নামাজ দিনের নফল নামাজের চেয়ে উত্তম। কারণ রাতের নামাজ ও তিলাওয়াতে মনোযোগ ও একাগ্রতা বেশি থাকে।
৪. নামাজ ছাড়াও রাতে আল্লাহর স্মরণ, জিকির ও দোয়াও ফজিলতপূর্ণ আমল।
৫. আল্লাহ তাআলা পূর্ব-পশ্চিমসহ সমগ্র বিশ্বজগতের মালিক। তাই সব ব্যাপারে তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত, তার ওপরই ভরসা করা উচিত।