সময় অসময়ের কল-এসএমসে বিরক্ত গ্রাহক ভোগান্তি বন্ধে বিটিআরসি ডু নট ডিস্টার্ব সার্ভিস চালু করলেও তা পুরোপুরি কার্যকর নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
নিবন্ধিত মোবাইল অপারেটর কোম্পানী এবং থার্ডপার্টিগুলো দিনে ৪৪টি সেবার জন্য দেড়শ’ কোটি প্রোমোশনাল এসএমএস পাঠায় গ্রাহককে। এসব এসএমএস আর বিজ্ঞাপনী কলের নেই কোনও সময় জ্ঞান।
বিটিআরসির তথ্য বলছে, প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন, অফার, মিনিট প্যাকেজ, ইন্টারনেট, মিসডকল অ্যালার্ট নিয়ে সর্বমোট ৪৪টি সেবা রয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭ কোটি এসএমএস গ্রাহককে পাঠায়, যা কখনও কখনও বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
গ্রাহকরা জানান, প্রতিদিন অনেক ম্যাসেজ পাই। নামটা দেখে সেটা ইগনোর করে চলে যায়। কারণ, এই মুহূর্তে এটা আসলে আমার প্রয়োজন নেই।
সঙ্গে আছে বাল্ক ও কালোবাজারি এসএমএস ব্যবসায়ী চক্রও। তারা যে শুধু বিরক্তিকর ম্যাসেজ/এসএমএস ই উৎপাদন করছে ঠিক তাই-ই নয়, নাগরিক অধিকার ক্ষূন্ন করার পাশাপাশি হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা এবং গুরুপ্তপূর্ণ তথ্য।
এক মেডিসিন চিকিৎসক জানালেন, “আমি রোগী দেখছি, এর মাঝখানেই একটা নাম্বার অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো, আমি জরুরি মনে করে ফোনটা ধরলাম। ধরার পরে দেখা গেল যে, তিনি তার কাপড়ের দোকানের সকল সিল্কি শাড়ির ওপর ১৫% ছাড়ের অফারটি জানাচ্ছে। তার মানে হচ্ছে, আমার ফোন নম্বরটি বেহাত হয়ে যাচ্ছে এবং এই কোম্পানিগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে”
গ্রাহক ভোগান্তি নিরসনে রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে বিটিআরসির। কিন্তু ভোর ৬টার পর থেকে শুরু হওয়া কল ও এসএমএস বৃষ্টি একের পর এক এসএমএস আসতেই থাকে, যা একপ্রকার অত্যচার ও বিরক্তির বলছেন গ্রাহকরা।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, “সার্ভিসটা যখন আমরা উপভোগ করতে গেলাম, তখন দেখা গেল এটার মধ্যে শুভঙ্কর একটা ফাঁকি। এর মাধ্যমে শুধু মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রোমোশনাল প্যাকেজগুলো বন্ধ করা যাবে, কিন্তু বাদ-বাকি লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান থেকে যে বিরক্তিকর মেসেজ অফার দিচ্ছে সেগুলো বন্ধ যাবে না। কারণ, এগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই নেই।”
তবে গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে ডিএনডি কাজ করছে বলে দাবি বিটিআরসির এই কর্মকর্তার।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, “এটা হচ্ছে দুই দিক থেকে, গ্রাহকের পক্ষ থেকে একটা ভিউ এবং মোবাইল অপারেটর থেকে আরেকটা ভিউ। গ্রাহকরা যদি এই সার্ভিসটা না বোঝে সেটার দায়িত্ব কিন্তু আমরা কেউ নিতে পারবো না।”
এই বিরক্তকর এসএমএস আমরা ২ভাবে বন্ধ করতে পারি: টেকনিক্যালিভাবে ও গ্রাহকের পক্ষ থেকে বা সাধারণভাবে। টেকনিক্যালি সাধারণত সিম কম্পানি কতৃর্ক হয়ে থাকে, আর গ্রাহকের পক্ষ/সাধারণভাবে বলতে নিজে সর্তক থাকার মাধ্যেমে হয়ে থাকে।
টেকনিক্যালি:
# গ্রামীণফোনের প্রোমোশনাল এসএমএস বন্ধ করতে ডায়াল করুন *১২১*১১০১
আবার চালু করতে ডায়াল করুন *১২১*১১০২
# রবি গ্রাহকরা ১২৩ নম্বরে ফোন দিয়ে ডিএনডি (ডু নট ডিস্টার্ব) সেবা চালুর জন্য অনুরোধ করতে পারবেন। এজন্য ফোন করে বলতে হবে, ‘আমি এই সেবা চাই না।’ তাহলে সংশ্লিষ্টরা ফোনদাতাকে নিয়ে যাবে ডিএনডি বিভাগে।
# এয়ারটেলের গ্রাহকরা ১২৩ নম্বরে ফোন দিয়ে ডিএনডি (ডু নট ডিস্টার্ব) সেবা চালুর জন্য অনুরোধ করতে পারবেন।
# কেউ বাংলালিংক নম্বরে এসএমএস না চাইলে মেসেজ অপশনে গিয়ে অফ (OFF) লিখে ৬১২১ নম্বরে এসএমএস পাঠানো যাবে।
# টেলিটকের এ ধরনের কোনও সেবা (এসএমএস ব্লক) নেই।
সাধারণভাবে:
# একাধিক সিম ব্যবহার করা, যেমন কাজের ও ব্যাক্তিগত নাম্বার আলাদা আলাদা থাকা।
# ব্যক্তিগত নাম্বার পরিচিত ছাড়া অন্যকে কাউকে না দেওয়া।
# ব্যাক্তিগত নাম্বার কাজ অথবা ব্যবসায়ের কাজে না লাগানো।
# কোন দোকানে অথবা কোন মার্কেটে কোন কিছু কেনার পর নিজের ব্যাক্তিগত নাম্বার দিয়ে ছেড়ে না আসা।
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করলে, ইনশাল্লাহ আপনার মোবাইলে আসা বিরক্তকর এসএমএস গুলো বন্ধ করা যাবে।