২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:২২:৪০ অপরাহ্ন


দীনি বিষয়ে না জেনে কিছু বলা হারাম
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১০-২০২৩
দীনি বিষয়ে না জেনে কিছু বলা হারাম ফাইল ফটো


আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তোমাদেরকে যে ইলম দান করেছেন, তা তোমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো করে তুলে নেবেন না। বরং বিজ্ঞ আলেমদের তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন। এক পর্যায়ে যখন শুধু মুর্খরা থেকে যাবে, তখন লোকেরা তাদের কাছেই দীনি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে। তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো ফতোয়া দেবে এবং নিজেরা ভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও ভ্রষ্ট করবে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই

১. দীনি বিষয়ে না জেনে কিছু বলা হারাম। এটা নিজের ও অন্য অনেকের ভ্রষ্টাতার কারণ হয়। কিছু না জানলে মুসলমানদের কর্তব্য হলো বলে দেওয়া, ‘আমি জানি না।’ রাসুল (সা.) কোনো বিষয়ে না জানলে বলতেন, ‘জানি না’। পূর্ববর্তী অনুসরণীয় শ্রেষ্ঠ আলেমরাও তাই করতেন। জুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) বলেন এক ব্যক্তি নবিজিকে (সা.) প্রশ্ন করলো, কোন জায়গা সবচেয়ে নিকৃষ্ট? নবিজি (সা.) বললেন, আমি জানি না, জিজ্ঞাসা করে জানাবো। পরে তিনি এ ব্যাপারে জিবরাইলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন। জিবরাইল (আ.) বললেন, আমি জানি না, আমার রবের কাছে জিজ্ঞাসা করতে হবে। তারপর তিনি চলে গেলেন এবং আল্লাহ যখন চাইলেন, তখন এসে বললেন, আমি রবের কাছে ওই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হলো বাজার। (মুসনাদে আহমদ) ইবনে হাজার হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। আবু আব্দুল্লাহ হাকেম (রহ.) তার মুসতাদরাক কিতাবে বলেছেন, এই হাদিসটিই আলেমদের ‘জানি না’ বলার দলিল।

২. আল্লাহ অজ্ঞদের ওপর ওয়াজিব করেছেন যে, তারা কোনো বিষয়ে না জানলে আলেমদের কাছে জিজ্ঞাসা করবে। আল্লাহ বলেছেন,

فَسۡـَٔلُوۡۤا اَهۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ

তোমরা যদি না জানো তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করো। (সুরা নাহল: ৪৩)

তাই কিছু না জানলে অজ্ঞদের কাছে জানতে চাওয়া নাজায়েজ। কোনো মুর্খের কথা গ্রহণ করাও নাজায়েজ। যেহেতু তা তার বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার কারণ হতে পারে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরিন (রহ.) বলেছেন, এই ইলম দীন, তাই দেখো, কাদের থেকে তোমরা দীন নিচ্ছো। (সহিহ মুসলিম)

৩. দীনি বিষয়ে না জেনে বলার উৎসাহ ও প্ররোচনা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। এটা অনেক বড় ফিতনা ও গুনাহের কারণ হয়। আল্লাহ বলেন,

اِنَّمَا یَاۡمُرُکُمۡ بِالسُّوۡٓءِ وَ الۡفَحۡشَآءِ وَ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ

নিশ্চয় সে তোমাদেরকে আদেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলতে, যা তোমরা জান না। (সুরা বাকারা: ১৬৯)

আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

قُلۡ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ مَا بَطَنَ وَ الۡاِثۡمَ وَ الۡبَغۡیَ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَ اَنۡ تُشۡرِکُوۡا بِاللّٰهِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِهٖ سُلۡطٰنًا وَّ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ

বলো, আমার রব প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অন্যায়, অসঙ্গত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা, আল্লাহর অংশীদার স্থির করা যে ব্যাপারে তিনি কোন প্রমাণ নাজিল করেননি, আর আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের অজ্ঞতাপ্রসূত কথাবার্তা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। (সুরা আরাফ: ৩৩)

সুতরাং দীনি বিষয়ে না জেনে কিছু বলা হারাম ও মারাত্মক গুনাহের কাজ। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।