২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০১:২১:০৯ পূর্বাহ্ন


যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কর্তৃক কেন্দ্রিয় সরকারের অর্থ আত্মসাৎ
নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০১-২০২২
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কর্তৃক কেন্দ্রিয় সরকারের অর্থ আত্মসাৎ ভুক্তভোগি পার্থ গুপ্তের সংবাদ সম্মেলন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কর্তৃক কেন্দ্রিয় সরকারের অর্থ আত্মসাৎ


হোম কেয়ার ব্যবসায় কর্মচারিদের 'বেতন সুরক্ষা কার্যক্রম' বা পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি)-এর জন্য কেন্দ্রিয় যুক্তরাষ্ট্র (ফেডারেল) সরকারের দেওয়া ঋণের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন নিউ ইয়র্কের হোম কেয়ার ব্যবসায়ী প্রতারক শাহনাওয়াজ। তিনি দু'টি হোম কেয়ার ব্যবসায় ১৪০ জন কর্মাচারি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় সরকারের কাছ থেকে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৭২৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লাখ ১ হাজার ৯৬৫ টাকা) পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ গ্রহণ করে দুই অংশীদার মিলে ভাগ করেছেন। কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে তারা নিজেদের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্তানান্তর করেছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন ব্যবসার সাবেক অংশীদার পার্থ গুপ্ত।      

পার্থ অভিযোগ করেন, বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের আমি অংশীদার ছিলাম। এ দু'টি প্রতিষ্ঠানের নামে পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি)-এর জন্য কেন্দ্রিয় যুক্তরাষ্ট্র (ফেডারেল) সরকারের দেওয়া ঋণের অ্রর্থের হিসাব চাওয়ায় অংশীদারদের সাথে মনোমালিন্য দেখা দেয়। আর এই সুযোগে তাকে হেনস্থা করতে পাঁচমাস আগে অর্থাৎ গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ২৯ মিনিটে তার ব্যবসার অংশীদার হোম কেয়ার ও ইন্সুরেন্স ব্যবসায়ী শাহনাওয়াজ নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের কাছে জীবন নাশের হুমকির অভিযোগ দায়ের করেন। শাহনাওয়াজ অভিযোগ করেন পার্থ তাকে জীবন নাশের (হত্যা) হুমকি দিয়ে তার ফোনে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছি। এছাড়াও গত বছর ২৯ আগষ্ট জ্যাকসন হাইটসের ৭৬-৩৭ স্ট্রিটের ওপর একটি পথমেলায় পার্থসহ কয়েকজন মিলে সন্ধ্যা ৬টা/সাড়ে ৬টার দিকে তাকে মারধর করেছেন। এ সময় তার জীবন নাশের উদ্দেশ্যে পার্থ ও তার সহযোগিরা বিপজ্জনক যন্ত্র (পিস্তল, রিভলভার, রাইফেল, শর্টগান কিংবা মেশিনগান) প্রদর্শন করে (মামলার ডকেট নম্বর-'সিআর-০২০৫৬০-২১ কিউএন') গুলি করার হুমকি দেন। এসব অভিযোগের সমর্থনে তিনি ফটোশপে তৈরিকৃত পার্থ'র ছবির পাশে তার হোটেলের বিছানায় পিস্তলযুক্ত ছবি পুলিশের কাছে জমা দেন। তার ব্যবসা, শিল্পীজীবন এবং তার পরিবারকে ধ্বংস করার মহাপরিকল্পনা করেছিলো এই প্রতারক শাহনাওয়াজ।

পার্থ বলেন, মানুষ কতটা জঘন্য হলে এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করতে পারে তা ভাবতেও অবাক লাগে। আপনাদের সবার দোয়া ও আশির্বাদে আমার বিরুদ্ধে তার সেই সাজানো ভুয়া অস্ত্র মামলাটি গত ১২ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের একটি ফৌজদারি আদালতে খারিজ করেছেন বিজ্ঞ বিচারক।      

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পার্থ বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক উক্ত মামলার নেপথ্যে যেসব ঘটনা রয়েছে তা সবাইকে জানানো একান্ত প্রয়োজন।

তিনি বলেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারি ভয়াবহ আকার ধারন করায় কেন্দ্রিয় (ফেডারেল) সরকার কর্তৃক ক্ষুদ্রসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ প্রদানের ঘোষনা  দিলে শাহনাওয়াজ তার দু'টি হোম কেয়ার (বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার) এর নামে আবেদন করেন  এবং উল্লেখিত পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেন।  

২০১৭ সালের শেষের দিকে বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক-এর পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। পরিচালনা পরিষদে তাকে ডাইরেক্টর নির্বাচন করা হয়। এ সময় লভ্যাংশ নীতি নির্ধারনের মাধ্যমে শাহ নেওয়াজ ও অন্য আরেকজন অংশীদার প্র্যতেকে শতকরা ৪৫ শতাংশ এবং আমাকে শতকরা ১০ শতাংশ লভ্যাংশ বন্টনের কথা উল্লেখ করা হয়। পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠনের পর এ প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৮০ শতাংশ রোগী আমিই সংগ্রহ করে দেই। তার মেধা দিয়ে ও দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানটিকে অগ্রগামী ও জনপ্রিয় করে তোলেন, কিন্তু কাজের তুলনায় তার লভ্যাংশের পরিমাণ খুবই কম। তিনি বুঝতে পারেন যে পরিমাণ পরিশ্রম করছেন সে তুলনায় তার অর্থ অর্জন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা ক্রেন তিনি। এমন সময় শাহ নাওয়াজের প্রতারণার ফাঁদে পড়েন তিনি। ২০২০ সালের মার্চে মার্কিন ব্যবসায়ী ম্যারিয়েন হার্নেনের কাছ থেকে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার যৌথভাবে কেনার জন্য প্রথম কিস্তিতে তিনি তাকে ২৫ হাজার ডলার এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে আরো ৫১ হাজার ডলার প্রদান করি। মৌখিক চুক্তি মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্যাংক একাউন্টসহ অন্য কোন দাপ্তরিক কাজে তার নাম সংযুক্ত করার কথা থাকলেও তা করেননি শাহনাওয়াজ। এ নিয়ে তাকে বারবার প্রশ্ন করেন পার্থ। আজ হবে কাল হবে সময় কাটান শাহনাওয়াজ। গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার ইঙ্ক চালুর আগে এ প্রতিষ্ঠানে শাহনাওয়াজ প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এক মাসের মাথায় আমার অগোচরে শাহনাওয়াজ অত্যন্ত সুকৌশলে তার স্ত্রী আমেনা নেওয়াজ ওরফে রানো নাওয়াজকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেন। এতে তিনি আপত্তি করেও কোন ফল পায়নি। আমাকে ২৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেবার কথা বলেন শাহনাওয়াজ। কিন্তু তিনি সুকৌশলে স্ত্রীকে পরিচালনা পরিষদে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দিয়ে আমেনা নেওয়াজকে ২০ শতাংশ, আমাকে ২০ শতাংশ আর শাহনাওয়াজ শতকরা ৬০ শতাংশ লভ্যাংশ নেবার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি শাহনাওয়াজের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ব্যবসা পুরোপুরি চালু হলেও শাহনাওয়াজ কোন হিসাব-নিকেশ তাকে দিতেন না। এ প্রতিষ্ঠানেও শতকরা ৮০ শতাংশ রোগী সংগ্রহ করেছেন তিনি এবং ৭৬ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেন। গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারে শাহনাওয়াজ কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন তা তিনি এখনও জানতে পারেন নাই। এসব নানা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য দেখা দেয়। যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘদিন কোন কথাবার্তাও হয়নি তাদের মাঝে।

নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নামে পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ পাবার খবর পেয়ে বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার ইঙ্ক পিপিপি ঋণ পেয়েছে কিনা শাহনাওয়াজের কাছে জিজ্ঞেস করেন। জবাবে তিনি বলেন এখনও আবেদন করাই হয় নাই। চলতি বছরের ১৯ মে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের ৩১ জন কর্মচারির বিপরীতে ৮০ হাজার ৬৯০ ডলার এবং বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্কের ১০৯ জন কর্মচারি দেখিয়ে তাদের বিপরীতে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯ ডলার পিপিপি ঋণ বরাদ্দের অনুমোদন পান। ঋণ অনুমোদনের চিঠি পাবার পর হটাৎ করেই শাহনাওয়াজ তাকে অপর অংশীদারের সাথে ইচ্ছাকৃত ঝগড়ায় লিপ্ত হতে বলেন। তখনও তিনি জানেন না তাদের প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনুমোদনের কথা। অন্য অংশীদারের সাথে তার ঝগড়া বাধিয়ে দিয়ে শাহনাওয়াজ গোপনে তার সাথে যুক্তি করে বেঙ্গল হোম কেয়ারের পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণের অর্থ সিটি ব্যাংক থেকে তুলে তারা দু'জনেই ভাগ করে নেন। বেঙ্গল হোম কেয়ারের এ অর্থের লভ্যাংশ থেকে তাকে বঞ্চিত করার জন্য শাহনাওয়াজ নতুন এ কৌশল অবলম্বন করেন। গত বছরের মে মাসে বেঙ্গল হোম কেয়ারের ঋণের অর্থ তাদের মধ্যে ভাগাভাগি হবার পর ৭ জুন বেঙ্গল হোম কেয়ার পূর্বের মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত কাগজপত্রে আমি ও শাহনাওয়াজ স্বাক্ষর করি।

এ সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পার্থ গুপ্ত, তাকে সহায়তা প্রদানকারি যুক্তরাষ্ট্রস্থ ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপম্যান্ট ফাউন্ডারের প্রেসিডেন্ট শাহ শহিদুল হক সাঈদ এবং লিটন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে এসে পার্থ'র দু'টি কথা শোনার জন্য সাবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। তার অন্তিম সময়ে যারা এ মামলা সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করেছেন, যারা প্রকাশ করেননি এবং যারা প্রকাশ করবেন বলে এখনও ভাবছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি। এছাড়াও আরও ধন্যবাদ জানান তার বিপদের সময় যারা পাশে থেকে তাকে সাহস যুগিয়েছেন।

রাজশাহীর সময় /এএইচ