২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০২:৫৪:৪৮ অপরাহ্ন


যেভাবে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিলেন রাসুল (সা.)
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২৩
যেভাবে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিলেন রাসুল (সা.) ফাইল ফটো


দশম হিজরিতে বিদায় হজের পর থেকেই রাসুল (সা.) পৃথিবী থেকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এ সময় তার ভাষণ ও কথাবার্তায় থাকতো বিদায়ের সুর। সাহাবিদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিতেন তার ওফাতের পরবর্তীসময়ে আসা ফিতনা ও সংকটের ব্যাপারে।

ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদিন ফজরের নামাজের পর রাসুল (সা.) আমাদেরকে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী নসিহত করলেন। সবার চোখ অশ্রুসিক্ত হলো, হৃদয় ভীত-শঙ্কিত হলো। এক লোক বলে উঠলো, এটি বিদায়ী নসিহতের মতো শোনাচ্ছে! তাই বলুন আপনি আমাদের থেকে কী অঙ্গীকার নেবেন? রাসুল (সা.) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি অর্জনের ওসিয়ত করছি, নেতার কথা মান্য করা ও তার আনুগত্যের নির্দেশ দিচ্ছি, যদি সে হাবশী দাসও হয়। তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাত আঁকড়ে ধরো, মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে কামড়ে ধরো। আর সব নবঅবিষ্কৃত বিষয় থেকে বেঁচে থাকো, সব নবআবিষ্কৃতি বিষয়ই বিদআত আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (সুনানে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

একাদশ হিজরির সফর মাসের শেষ দিকে রাসুল (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই সংকটাপন্ন হতে থাকে। সব স্ত্রীদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তিনি আয়েশার (রা.) ঘরে শয্যা নেন। ওফাতের আগের কিছু দিন রাসুল (সা.) আয়েশার (রা.) ঘরেই ছিলেন। একদিন রাসুল (সা.) উম্মুল মুমিনিন আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ঘরে কিছু স্বর্ণমুদ্রা ছিল সেগুলো কোথায়? আয়েশা (রা.) পাঁচ/সাতটি স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে এলেন। রাসুল (সা.) বললেন, এগুলো সদকা করে দাও।

মৃত্যুর আগে তিনি তার প্রয়োজন-অতিরিক্ত সব কিছুই দান করে দেন, তার সব গোলামদের আজাদ করে দেন। (মুসনাদে আহমদ)

তিনি যখন নামাজ পড়াতে অক্ষম হয়ে পড়লেন, তখন সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন আবু বকরের (রা.) ইমামতিতে নামাজ পড়তে।

একদিন তিনি মাথায় এক টুকরো কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে বাইরে এসে মিম্বরে বসলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনার পর বললেন,

‏ إِنَّهُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ أَحَدٌ أَمَنَّ عَلَىَّ فِي نَفْسِهِ وَمَالِهِ مِنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَبِي قُحَافَةَ، وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا مِنَ النَّاسِ خَلِيلاً لاَتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلاً، وَلَكِنْ خُلَّةُ الإِسْلاَمِ أَفْضَلُ، سُدُّوا عَنِّي كُلَّ خَوْخَةٍ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ غَيْرَ خَوْخَةِ أَبِي بَكْرٍ ‏

জীবন ও সম্পদ দিয়ে আবু বকর ইবনে আবু কুহাফার চেয়ে বেশি ইহসান আমার ওপর কেউ করেনি। আমি কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলে অবশ্যই আবু বকরকে গ্রহণ করতাম। তবে ইসলামের বন্ধুত্বই উত্তম। আবু বকরের দরজা ছাড়া এই মসজিদের সব দরজা বন্ধ করে দাও। (সহিহ বুখারি: ৪৬৭)

এভাবে সাহাবিদের তিনি বুঝিয়ে দেন তার ওফাতের পর কাকে তার স্থলাভিষিক্ত বানাতে হবে, কে খলিফা হবেন।

এরপর আরেকদিন তিনি মিম্বরে আরোহণ করেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনার পর বলেন,

أُوصِيكُمْ بِالْأَنْصَارِ فَإِنَّهُمْ كَرِشِي وَعَيْبَتِي وَقَدْ قَضَوُا الَّذِي عَلَيْهِمْ وَبَقِيَ الَّذِي لَهُمْ فَاقْبَلُوا مِنْ مُحْسِنِهِمْ وَتَجَاوَزُوا عَنْ مسيئهم

আনসারদের ব্যাপারে তোমাদের আমি ওয়সিয়ত করে যাচ্ছি। তারা আমার অন্তরঙ্গ ও বিশ্বস্ত। তাদের দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করেছেন, এখন তাদের প্রতিদান দেওয়া বাকি রয়ে গেছে। তাদের উত্তম ব্যক্তিদের তোমরা গ্রহণ করো এবং তাদের মন্দ ব্যক্তিদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখো। (সহিহ বুখারি: ৩৭৯৯)

এটিই ছিল মিম্বরে বসে দেওয়া রাসুলের (সা.) শেষ খুতবা। এরপর তিনি আর কখনও মিম্বরে আরোহণ করেননি।

আয়েশা (রা.) বলেন, মৃত্যুর আগে বার বার নবিজি (সা.) বলছিলেন নামাজের প্রতি যত্নবান হতে এবং দাস-দাসীদের সাথে উত্তম আচরণ করতে। বলতে বলতে তার জিহ্বা মোবারক জড়িয়ে যাচ্ছিলো। (সুনানে নাসাঈ)

একাদশ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার সন্ধ্যায় আয়েশার (রা.) ঘরে রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আলি (রা.) তাকে গোসল দেন এবং কাফন পরান। জানাজার পর আয়েশার (রা.) ঘরেই নবিজিকে (সা.) সমাহিত করা হয়।