৪০টির নির্মাণকাজ শেষ * যান্ত্রিক বহরে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার টার্ন টেবল লেডার * জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা * শুরু হয়েছে নতুন একাডেমি ভবন নির্মাণের কাজ
সারা দেশে ২০০৯ সালে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন সংখ্যা ছিল ২০৪টি। এখন বেড়ে দাঁড়িছে ৪৯৫টি। ১৪ বছরে সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। নতুন ফায়ার স্টেশন চালু হয়েছে ২৯১টি। দেশব্যাপী আরও প্রায় আড়াইশ নতুন ফায়ার স্টেশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০টি ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। শনিবার চট্টগ্রামে কর্ণফুলী মডার্ন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার উদ্বোধন করা হয়েছে সিলেটে। ২৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে নতুন স্টেশনের উদ্বোধন করা হবে। এভাবে আটটি স্টেশন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগিরই নবনির্মিত ৩২টি ফায়ার স্টেশন একসঙ্গে উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এছাড়া সারা দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৭৩৫টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নে সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে আরও কিছু পদক্ষেপ। জনবল কাঠামো ৩০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য শুরু হয়েছে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ। মুন্সীগঞ্জে নির্মাণাধীন ওই একাডেমির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি’। একাডেমি স্থাপনের কাজ শেষ হলে সেখানে বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অপারেশনাল কাজে সক্ষমতার পাশাপাশি যে কোনো দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ফায়ার সার্ভিস এখন আর আগের অবস্থানে নেই। দুর্যোগকালীন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। জনসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর রাষ্ট্রের বেসামরিক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিনির্বাপণকালে আত্মাহুতি দেওয়া ১৩ জন ফায়ারফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ফায়ার সার্ভিসের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে গিয়ে কর্মতৎপরতা দেখানোর সুযোগ পেয়েছেন দেশের ফায়ারফাইটাররা। তুরস্কের ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিসের যান্ত্রিক বহরে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার (৬৮ মিটার উচ্চতার) টার্ন টেবল লেডার। টার্নটেবল লেডার গাড়ির মাধ্যমে সব বিভাগীয় পর্যায়ে বহুতল ভবনে অপারেশনাল কাজ পরিচালনার সক্ষমতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
রিমোট কনট্রোল ফায়ারফাইটিং ভেহিক্যালসহ অনেক আধুনিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। ড্রোন যুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের যান্ত্রিক বহরে। সংযুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জন্য আজীবন রেশন সুবিধা। ১ জুলাই ২০২৩ বা এর পরে অবসরে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই আজীবন রেশন সুবিধা পাবেন। ১৩ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, সরকার ঘোষিত পরিকল্পনায় স্মার্ট বাংলাদেশের পথে হাঁটছে দেশ। মানুষের চোখে-মুখে এখন উন্নত জীবনে পা রাখার স্বপ্ন। কিন্তু সব সুবিধার যেমন অসুবিধা আছে, তেমনই দেশ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। সেই ঝুঁকি মোকাবিলায় সব দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ফায়ার সার্ভিস সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফায়ার সার্ভিসে নানা ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। আধুনিক হয়েছে প্রতিষ্ঠানের সেবাক্ষেত্র। সরকারের সময়োপযোগী প্রকল্প গ্রহণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নানা অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি আধুনিক ও গতিশীল এই প্রতিষ্ঠানের সেবাকাজ। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফায়ার সার্ভিসের এই অগ্রগতি থামাতে এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নানা অপচেষ্টা ও অপপ্রচার চালাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন মহাপরিচালক হিসাবে ফায়ার সার্ভিসে যোগদানের পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের ধারা বেগবান হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান অনেক বেড়েছে। এই অগ্রগতির ধারা ধরে রাখাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০০৯ সালে এ অধিদপ্তরের জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজার, এখন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৮ জন। কয়েক বছর আগে আগুন নেভানোর গাড়ি ছিল ২২৭টি। এখন হয়েছে ৫৫৮টি। ১৪ বছর আগে ফায়ারফাইটিং পাম্প ছিল ৪৫০টি। এখন হয়েছে ১৫ হাজার ৪৬টি। আগে অ্যাম্বুলেন্স ছিল ৫০টি। পর্যায়ক্রমে আরও ১৫০টি অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়েছে। বিশেষায়িত ৫টি গাড়ির জায়গায় হয়েছে ৮৮টি গাড়ি। আগে ৮-১০ তলার ওপরে আগুন লাগলে তা নেভানোর সক্ষমতা আমাদের ছিল না। এখন অগ্নিনির্বাপণের ক্যাপাসিটি ২৪ তলা পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।