২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৩৮:৩২ অপরাহ্ন


ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই সম্পন্ন হলো থার্ড টার্মিনাল
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৯-২০২৩
ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই সম্পন্ন হলো থার্ড টার্মিনাল


কোনো ধরনের ব্যয় বাড়ানো ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ শেষ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আর মাত্র ১২ দিন পর আগামী ৭ অক্টোবর এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাবতীয় প্রস্তুতির পর এখন চলছে শেষ দিকের ঘষামাজার কাজ। এদিকে এই টার্মিনাল ঘিরে বিদেশি বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। ইতোমধ্যে ১২টি নতুন এয়ারলাইনস এখান থেকে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আবেদন করেছে।

সিলিংয়ে সোনালি, সাদা, আকাশি রঙের চোখ ধাঁধানো কারুকাজ। মেঝেতে লাগানো হচ্ছে বাহারি টাইলস। থার্ড টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ করলে অনিন্দ্যসুন্দর এ কর্মযজ্ঞে যে কারও চোখ আটকাতে বাধ্য। জানা গেছে, উদ্বোধনের সময় প্রকল্পের মোট ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হবে। শুরুতে হবে প্রকল্পের আংশিক অপারেশন। আরও অন্তত ১২ মাস পর পূর্ণ অপারেশন সম্ভব হবে।

জানা গেছে, উদ্বোধনের পর বিমানবন্দরের বর্তমান টার্মিনাল ১ ও ২ থেকে সব অপারেশনাল কার্যক্রম থার্ড টার্মিনালে স্থানান্তর করা হবে। পরবর্তীতে টার্মিনাল ১ ও ২ কেও একইভাবে থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে একীভূত করা হবে। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালটি বর্তমান কার্গো ভবনসংলগ্ন এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৩৫০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনালে একসঙ্গে থাকবে কেবিন এক্সরে মেশিন ৪০টি, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট, ১১টি বডি স্ক্যানার টানেল। ৫৪ হাজার বর্গমিটারের বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং, নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স ও ৬৩ হাজার বর্গমিটারের এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স। এ ছাড়া থাকবে রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং স্টেশন এবং ৪ হাজার বর্গমিটার ইক্যুইপমেন্ট স্টেশন। উড়োজাহাজ চলাচলে জন্য তৈরি হবে ২৪ হাজার বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর), ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (অন্যান্য) এবং ২২ হাজার বর্গামিটার র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর), ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (দক্ষিণ), ৯৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার সোল্ডার, জিএসই রোড ৮৩ হাজার ৮০০ বর্গমিটার, সার্ভিস রোড ৩৩ হাজার বর্গমিটার, ড্রেনেজ ওয়ার্কস (বক্স কালভার্ট ও প্রোটেক্টিভ ওয়ার্কস)।

টার্মিনালের চারদিকে থাকবে নিশ্চিদ্র বাউন্ডারি ওয়াল, সিকিউরিটি গেট, গার্ড রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। এর বাইরে সার্ভিস রোডসহ এলিভেটেড রোড, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ইনটেক পাওয়ার প্ল্যান্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য সিকিউরিটি ও টার্মিনাল ইক্যুইপমেন্ট, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম, হাইড্রেন্ট ফুয়েল সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক সব সুবিধা

থাকবে। এ ছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ফানেল টানেল রাখা হবে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের অ্যাপ্রোনে একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। এ ছাড়া থাকবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা। থাকবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। সব মিলিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে থার্ড টার্মিনালে।

থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানান বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ইতোমধ্যে সিলিংয়ের কাজ শেষ। মেঝেতে টাইলস লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ফিনিশিংয়ের কাজ। বাইরের গ্লাস লাগানোর কাজ শেষ। যন্ত্রপাতি লাগানো হচ্ছে। উদ্বোধনের পর অল্প পরিসরি থার্ড টার্মিনাল অপারেশনে যাবে। পুরোদমে অপারেশনে যেতে আরও ১ বছর অপেক্ষা করতে হবে। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই মেগাপ্রকল্পে এক টাকাও ব্যয় বাড়েনি। বিদেশি কিছু এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা করার আগ্রহ দেখিয়েছে। যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে।

জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। এতে অর্থায়ন করছে জাইকা। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাইকা। প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের জুনে।

জাপানের সিমুজি ও কোরিয়ার স্যামসাং যৌথভাবে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। দুই দেশের চার শতাধিক দক্ষ জনবল কাজ করছেন প্রতিদিন। বিশ্বখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় টার্মিনালে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি ভবন তৈরি হবে। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে বর্তমানে যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। নতুন টার্মিনাল হলে শুধু শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ২ কোটি যাত্রী সেবা পাবেন।

বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক বলেন, বিশাল এই মেগাপ্রকল্পটির ত্রুটি এড়াতে সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করছেন। এই বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। প্রতি সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজের অগ্রগতি নেয়ওা হচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ইউরোপ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করৃ২তে পারব