ইসলামের প্রাথমিক যুগে স্ত্রীদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতনের লক্ষ্যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদেরকে বারবার তালাক দেয়া এবং ফিরিয়ে নেয়ার মধ্যে সময় অতিবাহিত করতো। যাতে স্ত্রীরা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতো। কারণ এ অবস্থার ফলে স্ত্রীরা স্বামীর সঙ্গেও বসবাস করতে পারতো না। আবার অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারতো না।
আবার অনেক স্বামী বিবাহের সময় প্রদেয় মোহর তালাকের পর স্ত্রীদের থেকে নিয়ে নিতো; যা ইসলামি শরিয়তে আল্লাহর সীমা লংঘন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে বলেন-
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২২৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ওই সব স্বামী-স্ত্রীর বিষয়ে বিধান জারি করেছেন; যারা তাঁর স্ত্রীকে দুই তালাক দেয়ার পর আবার ফিরে পেতে চায় তাদের ব্যাপারে। আর যদি কোনো স্ত্রী আল্লাহর সীমারেখা পালনে কোনো কিছুর বিনিময়ে তালাক চায়; সে ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়েছে এ আয়াতে। পাশাপাশি স্বামী যদি কোনো স্ত্রীকে তালাক দেয়; তবে সে বিবাহের সময় যে মহর প্রদান করেছিলেন তা ফেরত না দেয়ার বিষয়টিও ওঠে এসেছে এ আয়াতে।
আয়াতে বলা হয়েছে-
তালাক অর্থাৎ যে তালাক প্রদানের পর স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে আনা যায় তা দুবার অর্থাৎ দুটি। অতঃপর স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণের মাধ্যমে কষ্ট প্রদান না করে রেখে দেয়া। অতঃপর ইদ্দত পালনের পূর্বে ফিরিয়ে নিয়ে আসলে তোমাদের কর্তব্য হলো তাদের রেখে দেয়া। অথবা তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসলে তাদেরকে সদয়ভাবে মুক্ত করে দেয়া; তাদের পথ ছেড়ে দেয়া।
আল্লাহ তাআলা স্বামীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে স্বামীগণ! যদি তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দাও; তবে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের যা মোহর হিসেবে প্রদান করেছ; তা হতে কোনো কিছু গ্রহণ করা তোমাদের জন্য বৈধ হবে না।
কিন্তু যদি তাদের স্বামী-স্ত্রী উভয়ের আশংকা হয় যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না। অর্থাৎ উভয়ে হক ও অধিকারের যে সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে; তা তারা পালন করতে পারবে না। তবে তার বিধান ভিন্ন।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘তোমরা যদি আশংকা কর যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না; তবে স্ত্রী কোনো কিছুর অর্থাৎ সম্পদের বিনিময়ে তালাকের মাধ্যমে নিজেকে মুক্ত করে নিতে চাইলে তাতে তাদের কারো কোনো অপরাধ নেই।
এ অবস্থায় স্বামীর জন্য তা গ্রহণ করায় এবং স্ত্রীর জন্য তা ব্যয় করায় কোনো পাপ নেই। এ সবই আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমারেখা।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা এ সব সীমারেখা লংঘন করো না; যারা এ সীমারেখা লংঘন করে তারাই অত্যাচারী।
আয়াতটি নাজিলের দুটি কারণ বর্ণিত হয়েছে-
>> হজরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘ইসলামের প্রথম যুগে মানুষ তার স্ত্রীকে যতবার ইচ্ছা তালাক দিতো আবার ফিরিয়ে নিতো। কেউ কেউ আবার এমনও করতো যে, নিজের স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর ইদ্দত শেষ হওয়ার নিকটবর্তী হলে পুনরায় ফিরিয়ে নিতো। তারপর আবার তালাক দিয়ে দিতো। মূলত তারা তাদের স্ত্রীকে কষ্ট দেয়ার জন্যই বারবার এমনটি করতো। আলোচ্য আয়াতটি তাদের এহেন আচরণের কারণে নাজিল হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি ও জালালাইন)
>> একবার এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলে বসল, আমি তোমাকে তালাকও দেব না যে, আমার থেকে পৃথক হয়ে যাবে; আবার কোনো দিন তোমার পাশেও আসব না। স্ত্রী লোকটি জিজ্ঞাসা করল তা কিভাবে? স্বামী বলল, ‘তোমাকে তালাক দিয়ে যখনই ইদ্দত শেষ হওয়ার উপক্রম হবে; তখনই তোমাকে আমি পুনরায় ফিরিয়ে নেব।
মহিলা তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করল। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি। অতঃপর কুরআনের এ আয়াত নাজিল হয়। (তিরমিজি, হাকেম) পড়ুন- সুরা বাকারার ২২৮ নং আয়াত
পরিষেশে...
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনে নির্ধারিত বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। স্বামী-স্ত্রী উভয়কে জুলুমের মতো অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। আল্লাহর সীমা লংঘন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।