২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০২:১৭:১৯ অপরাহ্ন


রাতে সুরা মুলক তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২৩
রাতে সুরা মুলক তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত ফাইল ফটো


হজরত উসমান (রা.) যখন কবরের পাশ দিয়ে যেতেন তখন কান্নায় তার দাড়ি ও বুক ভেসে যেত। লোকেরা জিগ্যেস করত আপনি জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা শুনেও এত বেশি কান্নাকাটি করেন না কিন্তু কবরের পাশ দিয়ে গেলে এত কান্নাকাটি কেন করেন? তিনি বলেন আমি রাসুলের (স.) কাছে শুনেছি কবর আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। যে ব্যক্তি এখানে নাজাত পেয়ে গেল, তার জন্য পরবর্তী মনজিলগুলো সহজ হয়ে যাবে আর যে ব্যক্তি এখানে মুক্তি পাবে না, তার জন্য পরবর্তী মনজিলগুলো আরও ভয়ানক হয়ে দাঁড়াবে। তবে রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন এশার নামাজের পর রাতে ঘুমানোর আগে যে ব্যক্তি সুরা তাবারাকাল্লাজি অর্থাৎ সুরা মুলক তিলাওয়াত করবে তার মৃত্যুর পর কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া হবে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআন শরিফে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে যা তার তিলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে না দেওয়া পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। সুরাটি হলো ‘তাবারাকাল্লাজি বি ইয়াদিহিল মুলক’ অর্থাৎ সুরা মুলক।

হাদিসে আছে রাসুল (সা.) কোনো রাতে সুরা মুলক না পড়ে ঘুমাতেন না। অন্য দিকে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন কবরস্থিত ব্যক্তির কাছে পায়ের দিক দিয়ে ফেরেশতারা শাস্তির জন্য আসতে চাইবে। তখন তার পদদ্বয় বলবে আমার দিক দিয়ে আসার রাস্তা নেই। কেননা সে সুরা মুলক পাঠ করত। তখন তার সিনা অথবা পেটের দিক দিয়ে আসতে চাইবে। তখন সিনা অথবা পেট বলবে আমার দিকে দিয়ে আসার কোনো রাস্তা তোমাদের জন্য নেই। কেননা সে আমার মধ্যে সুরা মুলক ভালোভাবে ধারণ করে রেখেছিল। তারপর তার মাথার দিক দিয়ে আসার চেষ্টা করবে। মাথা বলবে এদিক দিয়ে আসার রাস্তা নেই। কেননা সে আমার দ্বারা সুরা মুলক পাঠ করেছিল।

নবিজি (সা.) কী ভাষায় কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন তাও বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) দোয়ায় বলতেন, হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন-মৃত্যু ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে। (সহিহ বুখারি: ১৩৭৭) কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার সাথে সাথে সুরা মুলকের আমলও আমাদেরকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।

প্রতি রাতে সুরা মুলক তেলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। হাদিস অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরা আস-সাজদা ও সুরা মুলক তিলাওয়াত না করে কোনো দিন ঘুমাতেন না। তবে এর মানে এই নয় যে সুরাটি দিনে পড়া যাবে না। এটি যে কোনো সময় পড়া যাবে। তবে বিশেষত রাতে এ সুরা পড়া উত্তম।

সুরাটির নামেই এর বিষয়বস্তু ও মর্মার্থ ফুটে উঠেছে। আরবি মুলক মানে সার্বভৌমত্ব। আসমান ও জমিনে সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক যে আল্লাহ তা এ সুরায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ সুরার প্রথম আয়াতেই আল্লাহ সব ক্ষেত্রে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের কথা ঘোষণা করেছেন। দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে কে উত্তম তা পরীক্ষা করার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। খেয়াল করা দরকার আল্লাহ বলছেন ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন।’ এতে বোঝা যায় জীবনের মতো মৃত্যুও আলাদা একটি সৃষ্টি; অর্থাৎ শুধু জীবনের অবসান বা অনুপস্থিতিই মৃত্যু নয়। মৃত্যু স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি। এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যিনি মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন তিনি অবশ্যই মৃত্যু থেকে মুক্ত। অর্থাৎ মৃত্যু তাঁর ওপর কার্যকর হতে পারে না।

জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনার মাধ্যমে মানুষের জীবনের লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহকে ভয় করে যে বান্দা সিরাতে মুসতাকীমের ওপর অটল-অবিচল থাকবে এবং জীবন-পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে তার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে মহা পুরস্কারের। সাথে সাথে জীবন চলার পথে মানুষ যদি লক্ষচ্যুত হয়; আল্লাহর নাফরমানির পথ অবলম্বন করে, তাহলে তার জন্য কী ভয়াবহ পরিণাম অপেক্ষা করছে তা বিবৃত হয়েছে। আর পথভ্রষ্ট বান্দা তার পরিণাম প্রত্যক্ষ করে আখেরাতে কী ভাষা ও বাক্যে আফসোস-আক্ষেপ করবে তা-ও তুলে ধরা হয়েছে মর্মস্পর্শী উপস্থাপনায়। স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া সুযোগ ও ছাড়ের কথা।

পরিশেষে তাঁর বিভিন্ন নিয়ামতের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর প্রতি মানুষের মুখাপেক্ষিতা ও অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে আল্লাহর শোকর আদায় ও আখেরাতের পস্তুতির প্রতি। এসব কারণে সুরা মুলক মুমিনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক পাথেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার একান্ত ইচ্ছা যে এই সুরাটি আমার প্রত্যেক উম্মতের অন্তরে গেঁথে থাকুক।

ফখরুল ইসলাম নোমানী. লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট