১২ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ০৬:০৮:২৮ পূর্বাহ্ন


ডলার সংকটে কমছে আমদানি
অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২৩
ডলার সংকটে কমছে আমদানি ছবি: সংগৃহীত


বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে এলেও দেশে তার প্রভাব নেই বললেই চলে। গত আগস্টে প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ ডলার সংকট। ডলার না পাওয়ায় চাহিদামতো পণ্য আমদানি হচ্ছে না। যে কারণে গত অর্থবছর আমদানি প্রায় ১৬ শতাংশ কমে যায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে ১৮ শতাংশের বেশি। এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২২ শতাংশের ওপরে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানিতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। তবে এসব যেন দেশের অর্থনীতিতে উল্টো ফল বয়ে আনছে। ডলার সংকটের এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কমছে মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি। এর মানে দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়া সহজ হবে না বলে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বেশ আগে থেকেই তাদের অনেকে শুধু আমদানি নিয়ন্ত্রণ না করে দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে অর্থ পাচার কমানো, বেনামি ঋণ বন্ধের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কোনো ব্যাংক যেন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সার বেশি দরে ডলার কিনতে না পারে সে জন্য চাপাচাপি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও হুন্ডিতে প্রবাসী আয় পাঠালে মিলছে ১১৮ টাকা পর্যন্ত। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ৩৫৭ কোটি ডলারে নেমেছে।

সিমেন্ট খাতের একজন ব্যবসায়ী বলেন, এখন ডলার সংস্থান করা অনেক কঠিন। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা ডলার পাচ্ছেন না। বড় যেসব ব্যবসায়ীর রপ্তানি আছে অথবা ব্যাংকের মালিকানায় আছেন বা ব্যাংকের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন কেবল তারাই ডলার পাচ্ছেন। সংকটের কারণে নতুন করে শিল্পকারখানা হচ্ছে কম। আবার এখন সরকারের বড় প্রকল্পে কাজের গতি কমেছে। সব মিলিয়ে সিমেন্টের চাহিদাও কিছুটা কমেছে। এসব নিয়ে কোম্পানি এখন সংকটে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ১ হাজার ৫২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আর নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের তুলনায় এলসি খোলা ১৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে। দেশে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে বড় একটি উপায় মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি পরিস্থিতি দেখা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৩৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল ৩২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, পেট্রোলিয়াম ২৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, মধ্যবর্তী পণ্য ১৩ দশমিক ৭৮ এবং ভোগ্যপণ্যের এলসি নিষ্পত্তি কমেছে শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ। অবশ্য বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রভাবে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে খরচ কমেছে। যে কারণে এই পণ্যের এলসি প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চাপ দিয়ে সবসময় ভালো কিছু হয় না। এখন আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং কৃত্রিমভাবে ডলারের দর ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে রেমিট্যান্স কমছে। মূলত আমদানিতে চাপাচাপির কারণে এখন হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। যে কারণে হুন্ডিতে ডলার পাঠিয়ে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা পাচ্ছেন প্রবাসীর সুবিধাভোগী। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সার বেশি দরে ডলার না কেনার জন্য চাপাচাপি করছে। দুইয়ে মিলে প্রবাসী আয়ের বড় অংশ হুন্ডিতে চলে যাচ্ছে। এখন হুন্ডির সঙ্গে দর সমন্বয়ের একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ডলারের দর ঠিক না করে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার মাধ্যমে দর ঘোষণা করা হচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সমকালকে বলেন, এর আগে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল। তবে কয়েক মাস কমেছে। শিগগিরই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। হুন্ডির সঙ্গে ব্যাংকের দরে পার্থক্য কমানোর কোনো চিন্তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই এরকম কিছু ভাবা হচ্ছে না।