২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৪:৫৪:৫৪ অপরাহ্ন


স্ত্রী নির্যাতন বন্ধে কুরআনের নির্দেশ
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৯-২০২৩
স্ত্রী নির্যাতন বন্ধে কুরআনের নির্দেশ ফাইল ফটো


ইসলামের মূলমন্ত্রই হলো সমাজের সর্বস্তরে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। তা হোক পারিবারিক জীবনে কি রাষ্ট্রীয় জীবনে। এ কারণেই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় অত্যাচারীর অস্তিত্ব অসহায় আর তেমনি মজলুমের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত।

প্রাক ইসলামি যুগে যখন নারীদের কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না। সে সময়ের এক শ্রেণির স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের দীর্ঘ সময় ধরে বিবাহের বন্ধবে আবদ্ধ রেখেই অত্যাচার নির্যাতন চালাতো। যা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করেনি।

বরং আয়াত নাজিল করে তাদের প্রতি নিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। সুন্দর এবং উন্নত জীবন ব্যবস্থার দিক-নির্দেশনা ও উপদেশ প্রদান করেছেন।

অত্যাচার নির্যাতন ও কষ্টের উদ্দেশ্যে যাতে কোনো স্ত্রীকে দীর্ঘ সময় ধরে রজয়ী তালাক দিয়ে সময় ক্ষেপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা স্বামীদেরকে স্ত্রীদের প্রতি নির্যাতন বন্ধ করে তাদের প্রতি সুবিচার ও উত্তম ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলেন-

আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ

সুরা বাকারার ২৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারী নির্যাতন বন্ধ করে সুন্দর ও উন্নত জীবন যাপনে স্বামীদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন। তারা যেন কষ্টের উদ্দেশ্যে স্ত্রীদের রজয়ী তালাক দিয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ না করেন এবং তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীরা যদি ইদ্দত পালন করে তাদেরকে সুন্দরভাবে বিদায় দেয়। যা ইসলামের সৌন্দর্য উন্নত রীতিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

আগের (২৩০) আয়াতে স্বামী যদি স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক দেয়ার পর পুনরায় সে স্ত্রীকে বিয়ে করার কামনা করে; তবে করণীয় কী? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করেছেন।

অর্থাৎ কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়ার পর তাকে পুনরায় বরণ করে নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। তবে তার জন্য একমাত্র বৈধ ব্যবস্থা হলো ‘হালালাহ’ করা। অর্থাৎ অন্য স্বামীর নিকট নিয়মিত বিবাহ দেয়া এবং তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা শর্ত।

অতঃপর তাদের মাঝে সংসার জীবনে কোনো কারণে যদি ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়; তবে ইদ্দত পালনের পর ওই স্ত্রী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে।

আয়াতের তাৎপর্য

ইসলাম নারী নির্যাতন বন্ধ করার এবং নারী জাতির হক্ব বা অধিকার আদায় করার প্রতি কতখানি গুরুত্বারোপ করে তা এ আয়াত থেকেই অনুমান করা যায়।

ইরশাদ হচ্ছে- আর যখন তোমারা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা ইদ্দত পূর্ণ করে, তখন তাদেরকে সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক আপন করে রাখ; অথবা উত্তমভাবে বিদায় কর।

সাবধান! তাদের প্রতি অত্যাচার করার লক্ষ্যে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে আটকে রেখো না; এটি মানবতা বিরোধী কাজ। যে ব্যক্তি এমন অন্যায় আচরণ করবে; সে নিজেরই ক্ষতি কর; নিজের প্রতিই সে জুলুম করবে। কেননা এমন অন্যায় আচরণের কঠিন শাস্তি তাকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিধান জারি

আলোচ্য আয়াতে একটি বিধান জারি করা হয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এমন হতো যে, স্বামী তার স্ত্রীকে বলতো আমি তোমাকে তালাক দিলাম। অতঃপর বলতো আমি রসিকতা করে বলেছি। তখন এ আয়াত নাজিল হয়।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তিন বস্তু এমন রয়েছে; যদি কেউ বিদ্রুপ বা রসিকতা করে বলে বা বাস্তবিকই বলে; তবে সব অবস্থাতেই তা কার্যক হয়ে যাবে। আর তা হলো-

>> বিবাহ;

>> তালাক;

>> তালাক থেকে রুজু অর্থাৎ দুই তালাক দেয়ার পর আবার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া।

পরিষেশে...

ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক অত্যন্ত অপছন্দনীয় বৈধ কাজ। তাই কথায় কথায় যেন স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক না দেয়। আর যদি কোনো কারণে তালাক দেয়ার প্রয়োজন হয় তবে প্রথমে যেন রজয়ী তালাক দিয়ে স্ত্রীকে সতর্ক করে। যাতে করে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। তবে তা কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে যেন না হয়।

একটি কথা স্বামী-স্ত্রী উভয়কে মনে রাখতে হবে- তিন তালাক দেয়ার আগে শতবার চিন্তা করা উচিত। যদি কেউ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েই দেয়; তখন এ স্ত্রীকে ফেরত আনার জন্য তাকে অবশ্যই চড়া মূল্য দিতে হবে। যা নির্ভর করবে; যদি দ্বিতীয় স্বামী তাকে কখনো তালাক দেয়। নতুবা স্ত্রী আগের স্বামীর জন্য হালালাহ হবে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনে নির্ধারিত বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। নারী তথা স্ত্রী নির্যাতন বন্ধে আল্লাহর বিধানের বাস্তবায়ন করা তাওফিক দান করুন। কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক ইসলামী জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।