আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। মানুষ শত অপরাধের পরও যদি অনুতপ্ত হয়, ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
হাদিসে পূর্ববর্তী উম্মতের এক ব্যক্তির কথা বর্ণিত রয়েছে, যিনি ছিলেন ভয়ংকর খুনি; ৯৯টি খুন করেছিলেন তিনি। তারপর তার মনে অনুতাপ জেগে ওঠে এবং তিনি তওবা করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময়ের সবচেয়ে বড় পাদ্রী বা দরবেশের কাছে গিয়ে তিনি তওবা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তাকে বলেন, আমি ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছি, আমার কি ক্ষমা পাওয়ার কোনো উপায় আছে?
ওই পাদ্রী উত্তর দেন, না, এত ভয়াবহ পাপ করার পর তওবা কোনো সুযোগ নেই।
এ উত্তর শুনে ওই ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হন এবং ওই পাদ্রীকেও হত্যা করেন। তারপর তিনি ওই সময়ের আরেকজন বড় আলেমের কাছে যান। তার কাছে গিয়ে তিনি বলেন, আমি একশত জন মানুষকে হত্যা করেছি আমার কি তওবা করার সুযোগ আছে? আলেম উত্তর দেন, অবশ্যই, মৃত্যুর আগে যে কোনো সময় মানুষ তওবা করতে পারে। তুমি অমুক অঞ্চলে চলে যাও, সেখানে একজন বড় দরবেশ আছেন, তুমি তার কাছে গিয়ে তার সাথে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হও। নিজের এলাকায় আর ফিরে যেও না, ওই এলাকা তোমার জন্য ভালো নয়।
আলেমের পরামর্শ অনুযায়ী ওই ব্যক্তি দরবেশের কাছে যাওয়ার জন্য যাত্রা করেন। পথে তার মৃত্যুর সময় এসে যায়। ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো ভালো ও জান্নাতি ব্যক্তি যখন মারা যান, তখন রহমতের ফেরেশতারা আসেন এবং তার আত্মা ইল্লিয়্যিনে নিয়ে যান, মন্দ ও জাহান্নামি মানুষ হলে আজাবের ফেরেশতারা আসেন এবং তার আত্মা সিজ্জিনে নিয়ে যান। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ওই ব্যক্তিটিকে কারা নেবেন, তাকে জান্নাতি নাকি জাহান্নামি গণ্য করা হবে এ নিয়ে রহমত ও আজাবের ফেরেশতারা বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। রহমতের ফেরেশতারা বলেন, তিনি তওবা করেছিলেন। তাই তিনি জান্নাতি হওয়ার উপযুক্ত। আমরাই তার আত্মা নিয়ে যাবো।
আজাবের ফেরেশতারা বলেন, এই ব্যক্তি আজীবন পাপাচার ও অপরাধে লিপ্ত থেকেছেন। জীবনে একটি ভালো কাজও তিনি করেননি। তিনি জাহান্নামীই হবেন।
তখন একজন ফেরেশতা বললেন, তোমরা পথ মেপে দেখো তিনি দরবেশের কাছে যাওয়ার জন্য কতটুকু অগ্রসর হয়েছিলেন। তিনি যদি তার নিজের এলাকার কাছাকাছি থাকেন, তাহলে তাকে আজাবের ফেরেশতারা নিয়ে যাবেন, দরবেশের এলাকার কাছাকাছি থাকলে তাকে রহমতের ফেরেশতারা নিয়ে যাবেন।
পথ মেপে দেখা গেলো, তিনি দরবেশের এলাকার কাছাকাছি রয়েছেন। তাকে জান্নাতী গণ্য করা হয় এবং রহমতের ফেরেশতারা তার আত্মা নিয়ে যান। সূত্র: সহিহ মুসলিম (২৭৬৬)