আল্লাহ তাআলা এ মহাবিশ্বের স্রষ্টা। এই পৃথিবী, আকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র সবই তার সৃষ্টি। এগুলোর মধ্যে আল্লাহর বহু নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা তার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করছে। আল্লাহ বলেন,
اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ
নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সুরা আলে ইমরান: ১৯০)
চাঁদ আল্লাহর এক বিরাট সৃষ্টি ও নিদর্শন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ চাঁদের কথা বলেছেন। চাঁদ ও সূর্যকে নিজের সৃষ্টি ও নিদর্শন উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,
وَمِنۡ اٰیٰتِهِ الَّیۡلُ وَ النَّهَارُ وَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ لَا تَسۡجُدُوۡا لِلشَّمۡسِ وَ لَا لِلۡقَمَرِ وَ اسۡجُدُوۡا لِلّٰهِ الَّذِیۡ خَلَقَهُنَّ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاهُ تَعۡبُدُوۡنَ
আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ। তোমরা না সূর্যকে সিজদা করবে, না চাঁদকে। আর তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত কর। (সুরা হা মিম সিজদা: ৩৭)
চাঁদ ও সূর্য যেহেতু আল্লাহর একটি বিরাট ও দীপ্তিময় সৃষ্টি, মানুষ যেন ভুল করে চাঁদের উপাসনা শুরু না করে এ ব্যাপারেও সাবধান করা হয়েছে এ আয়াতে। এছাড়া কোরআনের অন্য দুটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা চাঁদের শপথ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
کَلَّا وَ الۡقَمَرِ
কখনো নয়, চাঁদের শপথ (সুরা মুদদাসসির: ৩২)
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
وَ الۡقَمَرِ اِذَا اتَّسَقَ
আর চাঁদের কসম, যখন তা পরিপূর্ণ হয়। (সুরা ইনশিকাক: ১৮)
চাঁদকে কোরআনে বলা হয়েছে নুর বা আলো এবং মানুষের জন্য মাওয়াকিত বা ক্যালেন্ডার। আল্লাহ চাঁদের জন্য বিভিন্ন মঞ্জিল নির্ধারণ করেছেন যেন মানুষ বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব করতে পারে। আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ الشَّمۡسَ ضِیَآءً وَّ الۡقَمَرَ نُوۡرًا وَّ قَدَّرَهٗ مَنَازِلَ لِتَعۡلَمُوۡا عَدَدَ السِّنِیۡنَ وَ الۡحِسَابَ مَا خَلَقَ اللّٰهُ ذٰلِکَ اِلَّا بِالۡحَقِّ یُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ
তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোকময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মঞ্জিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। (সুরা ইউনুস: ৫)
চাঁদ সূর্যসহ সব গ্রহ-নক্ষত্র আল্লাহর নির্দেশে পরিচালিত হয়। আল্লাহ এগুলো মানুষের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। আল্লাহ বলেন,
اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ یَطۡلُبُهٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ
নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও জমিন ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজি, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব। (সুরা আরাফ: ৫৪)
কেয়ামতের দিবসে যখন মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন চাঁদও আল্লাহর নির্দেশে জ্যোতিহীন, নিষ্প্রভ হয়ে পড়বে। আল্লাহ বলেন,
یَسۡـَٔلُ اَیَّانَ یَوۡمُ الۡقِیٰمَۃِ فَاِذَا بَرِقَ الۡبَصَرُ وَ خَسَفَ الۡقَمَرُ وَ جُمِعَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ ۙ یَقُوۡلُ الۡاِنۡسَانُ یَوۡمَئِذٍ اَیۡنَ الۡمَفَرُّ
মানুষ প্রশ্ন করে, কবে কেয়ামতের দিন? যখন চক্ষু হতচকিত হবে, চাঁদ কিরণহীন হবে আর চাঁদ ও সূর্যকে একত্র করা হবে, সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালানোর জায়গা কোথায়? (সুরা কিয়ামাহ: ৬-১০)