গাজীপুরের শ্রীপুরে মাত্র ৫০০ টাকার জন্য বন্ধুর স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করেছে এক তরুণ। ক্লুলেস এ ঘটনার দু’সপ্তাহের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত সুফিয়া (১৮) শ্রীপুর উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের মেয়ে। গ্রেপ্তারকৃত আরিফুল ইসলাম (১৯) ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার হাসের আলগী গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, পোশাক কারখানায় চাকুরিকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে আশিকুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে সুফিয়ার। এর জের ধরে প্রায় দেড় মাস আগে প্রথম স্বামী মোকাররমকে ডিভোর্স দিয়ে আশিকুরকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ায় পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে সুফিয়া তার দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি মধ্যপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন।
তিনি জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রতিদিনের মতো স্ত্রী সুফিয়াকে বাসায় রেখে কর্মস্থলে যান স্বামী আশিকুর। রাত ১০টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে ঘরের ভিতর নিস্তেজ অবস্থায় সুফিয়াকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সুফিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে ৯৯৯-এর সংবাদের ভিত্তিতে শ্রীপুর থানা পুলিশ ওই হাসপাতাল থেকে সুফিয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড প্রতীয়মান হওয়ায় নিহতের ভাই সোহেল বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় নিহতের বর্তমান স্বামী (দ্বিতীয়) আশিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে ঘটনার ১২দিন পর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকা হতে আশিকুরের বন্ধু আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ইমরান শেখ।
গ্রেপ্তারকৃতের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেওয়া পূর্বখন্ড এলাকার একটি জুয়েলারি দোকান থেকে নিহতের এক জোড়া স্বর্ণের দুল ও রূপার একজোড়া নূপুর জব্দ করেছে পুলিশ। এছাড়া গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তারকৃত আরিফুল এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছে।
তিনি আরও জানান, আশিকুরের বেকার বন্ধু আরিফুল চাকরির সন্ধানে ঢাকা যেতে স্থানীয় কয়েকজনের কাছে যাতায়াত ভাড়া বাবদ ৫০০ টাকা ধার চেয়েও পায় নি। ধার না পেয়ে সে বন্ধু আশিকুরের বাসায় চুরির সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই বাসায় গিয়ে সুফিয়ার স্বর্ণালংকার রাখা পার্টস (হাত ব্যাগ) চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আরিফুল।
এসময় সুফিয়া বাথরুম থেকে বের হয়ে আরিফুলকে পার্টস নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে বটি-দা’ দিয়ে কোপ দেয়ার চেষ্টা করে। আরিফুল নিজেকে সামলে নিয়ে সুফিয়াকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে নিহতের লাশ ফেলে স্বর্ণালংকার ভর্তি ওই পার্টস নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়। যাওয়ার পথে পার্টসে থাকা কানের এক জোড়া স্বর্ণের দুল ও রূপার একজোড়া নূপুর কেওয়া পূর্বখন্ড এলাকার একটি জুয়েলারি দোকানে বন্ধক রেখে ৭ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পোশাক কারখানায় চাকুরিকালে আরিফুল ও আশিকুরের পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় বলে গ্রেপ্তারকৃত আরিফুল জানিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য ঘটনার দু’সপ্তাহের মধ্যে উন্মোচন হয়েছে।
রাজশাহীর সময় / এম আর