চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। এবার প্রতিটি ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ৫০ শতাংশ নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে। বাকি অর্ধেক দেওয়া যাবে এনজিও লিংকেজের মাধ্যমে। গত অর্থবছর নিজস্ব নেটওয়ার্কে অন্তত ৩০ শতাংশ বিতরণের নির্দেশনা ছিল।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেন ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খান। এ সময় বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দেবাশীষ সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক মো. নুরুল আমীন, সহকারী মুখপাত্র মো. সরোয়ার হোসেন ও সাঈদা খানম।
একেএম সাজেদুর রহমান খান বলেন, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি খাত। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদনে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। আগে কখনও ঋণ নেননি এমন কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব জমির পাশাপাশি লিজের জমিতে খামার স্থাপনের খরচ বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।
তিনি জানান, নীতিমালায় নতুনভাবে ছাদকৃষি, ভেনামি চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচে চাষে ঋণ বিতরণকে কৃষির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি ব্যাংকের মোট কৃষিঋণ লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ১৩ শতাংশ মৎস্য এবং ১৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে বিতরণ করতে বলা হয়েছে। কোনো ব্যাংক সামগ্রিকভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে অনর্জিত অংশ ১৮ মাসের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হবে। এর বিপরীতে মাত্র ২ শতাংশ সুদ পাবে ওই ব্যাংক। এই অর্থ অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর জন্য মোট ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১০৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। যদিও ৮টি ব্যাংক গত অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করেনি। এসব ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত ২ হাজার ৭০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হবে।
গত অর্থবছর সব ব্যাংক মিলে নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা বা ৫৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বিতরণ করে। মূলত সরকারি ব্যাংকের ঋণের সবই নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। নিজস্ব নেটওয়ার্কে বিতরণে কৃষক পর্যায়ে এখন সর্বোচ্চ সুদহার ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছরে যা ৮ শতাংশ ছিল। তবে এনজিও লিংকেজে ঋণের ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হয়। যে কারণে এবার নিজস্ব লিংকেজে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে কম সুদের ঋণ বিতরণ বাড়াতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. নুরুল আমীন বলেন, কৃষি আমাদের আদি পেশা। ঋণ বিতরণে কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪১ শতাংশ কৃষি খাত নির্ভর। কৃষিকে অগ্রাধিকার দিতে না পারলে আগামী দিনের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। ঋণের বেশির ভাগ নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে। কেননা, এনজিওর মাধ্যমে ঋণ বিতরণে কৃষকদের ২৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হয়।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান বলেন, জনসংখ্যার চাপে কৃষিজমি প্রতিনিয়ত কমছে। এ কারণে তীব্র ডলার সংকটের মধ্যেও বিভিন্ন কৃষি পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধানে উৎপাদন বাড়াতে হবে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কৃষি খাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সিটি ব্যাংক গত অর্থবছর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১৬৮ দশমিক ২৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। আগামীতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।