তখনও তিনি বসিরহাটের সাংসদ হননি। তখনও সকলে তাঁকে চেনেন টলি অভিনেত্রী নুসরত জাহান হিসেবেই।
বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ তথা টলিউড অভিনেত্রী নুসরত জাহানের যে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ সংস্থার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে, সেই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রায় এক দশক আগেই কলকাতা পুলিশের কাছে জমা পড়েছিল অভিযোগ। এমনকী মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামে গড়ে ওঠা ওই নির্মাণ সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর রাকেশ সিংকে প্রতারণার অভিযোগে আগে গ্রেফতার করেছিল পুলিশও। রাকেশ বর্তমানে জামিনে মুক্ত।
সূত্রের খবর, ২০১১ সালে কলকাতার বুকে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘সেভেন সেন্সেস’ কোম্পানির। কলকাতায় ব্যবসা করলেও, কোম্পানির নথিভুক্ত ঠিকানা হিসেবে প্রথম থেকেই ছিল ভুবনেশ্বরের নাম। ২০১৪ সালে অন্যতম ডিরেক্টর হিসেবে ওই কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন নুসরত। অভিযোগকারীদের দাবি, ওই বছরই ৪২৯ জনের কাছ থেকে ফ্ল্যাট বাবদ ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে নিয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। প্রথমে গড়িয়াহাট এলাকায় ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা থাকলেও সংস্থার তরফে পরে জানানো হয়েছিল, একলপ্তে এত জমি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই রাজারহাট হিডকোর কাছে দেওয়া হবে ফ্ল্যাট। এমনকী দু’কামরার পরিবর্তে তিন কামরার ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, প্রতিশ্রুতি মতো ফ্ল্যাট না পেয়ে প্রতারিতরা সেই সময় গড়িয়াহাট থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অভিযোগ, থানা অভিযোগ নিতে না চাওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। পরে আদালতের নির্দেশেই কলকাতা পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) গড়িয়াহাট থানাকে দিয়ে আর্থিক প্রতারণার মামলার তদন্ত করিয়েছিলেন। তখনই গ্রেফতার হয়েছিলেন সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর রাকেশ।
তবে নুসরতের বিষয়ে সেই সময় পুলিশ কেন নিস্ক্রিয় ছিল, তা নিয়ে আজও ধন্দে প্রতারিতদের একাংশ।
তাঁদের একাংশের মতে, প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পেতে সেই সময়ই সংস্থার ডিরেক্টর পদ থেকে সরে আসার পাশাপাশি তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছিলেন নুসরত। তারপরই ২০১৮ সালে বসিরহাটের সাংসদ হিসেবে নুসরতের নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। তাঁদের মতে, শাসকদলের ছত্রছায়ায় চলে আসার কারণেই হয়তো সেই সময় নুসরতের বিরুদ্ধে পুলিশ বিশেষ পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও এই বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
প্রতারিতদের এমন ধারণাকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না শাসকদলের একাংশ নেতাও। তাঁদের মতে, “যা শুনছি তাতে এমন সম্ভবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” বস্তুত, এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দলের তরফে সাফ জানানো হয়েছিল, কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা প্রতারণার অভিযোগ উঠলে তাঁকেই মোকাবিলা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধেয় কয়েকজন প্রবীণকে নিয়ে আচমকা ইডির দফতরে হাজির হয়েছিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পাণ্ডা। সেখানেই নুসরতের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। যদিও প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে নুসরত এখনই কিছু বলতে চাননি। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে পুরো বিষয়টিকে ঘিরে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই পেতেই কি তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন নুসরত? যোগসূত্র হিসেবে নেপথ্যে কি ছিলেন দলেরই বিশেষ কেউ!