২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৭:৩৩:৩৪ পূর্বাহ্ন


উত্তমকুমারের মৃত্যুতে মৌসুমীকে দায়ী করেন সুপ্রিয়া !
তামান্না হাবিব নিশু :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৭-২০২৩
উত্তমকুমারের মৃত্যুতে মৌসুমীকে দায়ী করেন সুপ্রিয়া ! উত্তমকুমারের মৃত্যুতে মৌসুমীকে দায়ী করেন সুপ্রিয়া !


বাঙালির চিরকালের ম্যাটিনি আইডল মহানায়ক উত্তমকুমার। তাঁর স্থান আজও সবার উপরে। তিনি চার দশক আমাদের মধ্যে নেই, তবু তিনি সবসময়ই আমাদের সঙ্গে আছেন, তাঁর কালজয়ী সব চলচ্চিত্র দিয়ে। উত্তমকুমারের অকাল প্রয়াণ আজও মেনে নিতে পারেনা দর্শকেরা। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কালো দিন। সেদিনই প্রয়াত হন বাংলা ছবির স্বপ্নের হিরো উত্তমকুমার।

সলিল দত্তর ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র সেটে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন উত্তমকুমার। পরের দিন সব শেষ। এ ছবিতে উত্তমকুমারের সহ-নায়িকা ছিলেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। আর সঙ্গে সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়। মৌসুমী ততদিনে বম্বের প্রতিষ্ঠিত নায়িকা। শুধু তাই নয় তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ। কিন্তু ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র শ্যুটিংয়ের সময়ে এমনই একটি কথা রটেছিল, যাতে নাম উঠে আসে উত্তমকুমার আর মৌসুমী– দু’জনেরই। তার ক’দিন পরে মারাও যান উত্তমকুমার। তখন সুপ্রিয়া দেবী মৌসুমীকেই দায়ী করেছিলেন উত্তমকুমারের মৃত্যুর জন্য। সুপ্রিয়ার মতে, মৃত্যুর কারণ হয়তো সরাসরি মৌসুমী ছিলেন না, কিন্তু মৌসুমীর দেওয়া আঘাত নাকি উত্তম মানতে পারেননি। তাতেই এমন অকালে মৃত্যু।

জানা যায়, অন্যদিনের মতোই সেদিন একসঙ্গেই শ্যুট ছিল উত্তমকুমার ও মৌসুমীর। উত্তমকুমারের নিজস্ব মেক আপ রুমটিতে সেদিন কোনও এক সমস্যা ছিল, যে জন্য তাঁকে অন্য একটি মেক আপ রুম তাঁকে ব্যবহার করতে বলা হয়। উত্তমকুমার যখন সেই অন্য মেক আপ রুমটিতে ঢুকতে যাবেন, তখন তাঁকে বলা হয়, ‘দাদা এখন ঢোকা যাবে না। ভিতরে একজন বড় অভিনেত্রী মেক আপ করছেন। তিনি কাউকে মেক আপ রুমে ঢুকতে বারণ করেছেন।’                          

সেই অভিনেত্রী ছিলেন আর কেউ নন, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। উত্তমকুমার সেদিন খানিকক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন, তাঁর সময় কি ফুরিয়ে আসছে, তাই এই অপমান! এই ঘটনার ক’দিন পরেই প্রয়াত হন উত্তমকুমার।

এর পরে সুপ্রিয়া দেবী শোকবিহ্বল কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘নিজের স্টুডিও পাড়ায় মেক আপ রুমে না ঢুকতে পারার অপমানটা মেনে নিতে পারেনি উত্তম, তাও এক জুনিয়র অভিনেত্রীর থেকে। এত স্পর্ধা! শেষ জীবনে এই প্রাপ্তি ছিল আপনাদের দাদার!’ 

যদিও সে সময়ে মৌসুমী বড় নাম। রাজেশ খান্না, বিনোদ মেহরা, অমিতাভ বচ্চন, জিতেন্দ্রর হিরোইন মৌসুমী। কিন্তু উত্তমকুমারের কন্যাসমা তিনি বরাবরই। এই ঘটনার কথা জানতে পেরে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। মৌসুমী বলেন, ‘আমার কাছে উত্তমকুমার শুধু নায়ক নন। তিনি আমার উত্তমকাকু। তিনি আমার শ্বশুরমশাই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বন্ধু। আমাকে ইন্দু বলে কত ভালবাসতেন উত্তম কাকু। কেন আমি তাঁকে মেক আপ রুম থেকে তাড়িয়ে দেব? আমার কাছে খবর এসেই পৌঁছয়নি উত্তমকাকু সেদিন মেক আপ করতে আমার ঘরেই এসেছিলেন। তাঁকে চলে যেতে বলব এত স্পর্ধা বা সাহস আমার নেই। ২৪শে জুলাই উত্তম কুমার আমাকে বলেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে দেখতে আসবেন পরশু দিন। কিন্তু সেই পরশু দিনটা আর এল না। সে দিন রাতেই উত্তম কাকু মারা গেলেন।’

শোনা যায়, উত্তমকুমারের মৃত্যু হয়েছিল ভীষণ কাজের চাপ, সাংসারিক জীবনের চাপ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র সেট থেকে তিনি সেই রাতে একটি পার্টিতেও গেছিলেন। সেই রাতে তাঁর সঙ্গে সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন না বাড়িতে। তখনই অসুস্থতা বাড়ে। বেলভিউ নার্সিংহোমে গিয়েও শেষরক্ষা হয়না। মৌসুমীর আঘাত হয়তো গৌণ। কিন্তু স্টারডম ফুরিয়ে এলে বহু স্টারকেই অনেক কিছু সইতে হয় মানিয়ে নিতে হয়, এ কথা সত্যি!                       

‘ওগো বধূ সুন্দরী’র শ্যুটিং শেষ করে যেতে পারেননি উত্তমকুমার। তাঁর ডামি এনে ছবি শেষ হয়। ছবি রিলিজ হতেই সুপার ডুপার হিট। হিরো প্রয়াত, তবু তাঁর ছবি এত বড় হিট, এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। তবে পরে এই মেক আপ রুমের ঘটনা নিয়ে তখন কম চর্চা হয়নি। প্রচুর লেখালেখিও হয়েছিল সেসময়ের পত্রপত্রিকায়।

উত্তমকুমারের মৃত্যুর আট বছর পরে একই ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেন সুপ্রিয়া দেবী ও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। তখন ওঁদের প্রায় মুখ দেখাদেখি বন্ধ। মায়ের চরিত্রে কামব্যাক ছিল সুপ্রিয়ার। ছবির নাম ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’। পরিচালক বীরেশ চট্টোপাধ্যায়। এই ছবিতে নায়িকা সতীর চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী এবং তাঁর দজ্জাল অত্যাচারী শাশুড়ি মামণির ভূমিকায় সুপ্রিয়া দেবী। সুপ্রিয়া এমন কঠোর অভিনয় করেছিলেন, যে তিনি সব সংসারের আইকনিক দজ্জাল শাশুড়ি হয়ে ওঠেন। সুপ্রিয়া পর্দায় এলেই ত্রাস। সুপ্রিয়ার সংলাপ থেকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ– কাঁপিয়ে দিয়েছিল সবাইকে। 

ছবিতে একটি দৃশ্য ছিল, সতী কয়েক রাত বাড়ির বাইরে কাটানোয় শাশুড়ি মামণি সতীর মাথায় ছেলের অর্থাৎ সতীর স্বামীর পায়ের চটি দিয়ে সতীকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন বাড়ির গোটা দশেক পরিচারকের সামনে। অমন দৃশ্যে মৌসুমী ও সুপ্রিয়া দু’জনেই তুখোড় অভিনয় করেন। এই ছবিও বক্সঅফিস হিট সেসময়ে। অনেক দর্শক থেকে সমালোচক বলেছিলেন, মামণি চরিত্র করে সুপ্রিয়া যেন মৌসুমীর উপর উত্তমের আঘাতের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।

মৌসুমী অবশ্য সপাটে জবাব দিয়ে আরও বলেন, ‘একজন মহিলা ‘আপনাদের দাদা’ করে করে উত্তমকুমারকে নিজের সম্পত্তি ভাবতেন। তিনিই আমার নামে এসব কুকথা রটিয়েছিলেন।’