রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের সাথে তিনি কীভাবে বোঝাপড়া করবেন, বলছেন মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক।
মি. প্রিগোশিন হলেন ভাড়াটে সৈন্যদল ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান যিনি এক মাস আগে রাশিয়ায় এক বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সিআইএ’র প্রধান উইলিয়াম বার্নস বলছেন, এই বিদ্রোহ পুতিনের ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করে দিয়েছে।
নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা অ্যাস্পেন সিকিউরিটি ফোরামকে তিনি বলেন, রুশ নেতা সম্ভবত এখনও মি. প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাইতে পারেন।
বৃহস্পতিবার সিআইএ প্রধান বলেন, আমরা যেটা দেখছি তা খুবই জটিল এক বিষয়।
সাম্প্রতিক এক ভিডিও, যেখানে ওয়াগনার প্রধানকে বেলারুসে দেখা যাচ্ছে, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মি. বার্নস বলেন যে মি. প্রিগোশিনকে রাশিয়ার পাশাপাশি বেলারুসের রাজধানী মিনস্কেও ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, মি. পুতিন সম্ভবত সময় নিচ্ছেন কারণ ওয়াগনার গ্রুপের নেতাকে নিয়ে কী করা হবে তার সবচেয়ে ভাল উপায় এখন তিনি বের করার চেষ্টা করছেন।
আফ্রিকা, লিবিয়া এবং সিরিয়ার মতো দেশে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন এই ভাড়াটে সৈন্যদলের এখনও প্রয়োজন রয়েছে, এবং সেজন্য সম্ভবত মি. পুতিন ওয়াগনার গ্রুপকে তার নেতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চেষ্টা করবেন।
এবং সিআইএ প্রধান বলছেন, মি. পুতিন সঠিক প্রতিশোধের জন্য সময় নিতে চান।
"পুতিন এমন একজন মানুষ যিনি বিশ্বাস করেন সময় নিয়ে প্রতিশোধ নেয়াই হলো সবচেয়ে ভাল পথ," মি. বার্নস বলেন। "আমার অভিজ্ঞতা বলে, পুতিন হলেন প্রতিশোধের চূড়ান্ত প্রতিমূর্তি। তাই প্রিগোশিন যদি রক্ষা পায়, তাহলে আমি খুবই অবাক হবো।"
এমাসের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইংগিত করেছিলেন যে ওয়াগনার গ্রুপের প্রধানকে বিষ খাওয়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।
"তার জায়গায় আমি থাকলে আমি কী খাচ্ছি সেদিকে আমি সতর্ক থাকতাম। আমার মেন্যুর দিকে আমি নজর রাখতাম," কিছুটা কটাক্ষ করেই বলেছিলেন মি. বাইডেন।
সেই কথারই প্রতিধ্বনি করলেন সিআইএ’র পরিচালক: "আমি যদি প্রিগোশিন হতাম, তাহলে আমার খাবার পরীক্ষাকারীকে আমি বরখাস্ত করতাম না।"
এনিয়ে আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলির সত্যতা নিশ্চিত করে মি. বার্নস বলেন, ঐ বিদ্রোহের আগাম খবর সিআইএ’র কাছে ছিল।
সিআইএ প্রধান জানান, সিনিয়র রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন, যিনি ওয়াগনারের বিদ্রোহ সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন বলে জানা যাচ্ছে, তার ওপরও বর্তমানে "চলাচলের নিষেধাজ্ঞা" রয়েছে।
মি. বার্নস বলেন, ঐ ঘটনা ছিল মি. পুতিনের ২৩-বছর ব্যাপী ক্ষমতার বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ। ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য ক্রেমলিনের যুক্তিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে মি. প্রিগোশিন বলেছিলেন যে পুরো ব্যাপারটি মিথ্যের ওপর সাজানো হয়েছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সিআইএ প্রধান বলছেন, রুশ নেতা এমন এক ব্যক্তির সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন যিনি একসময় তার খাবার পরিবেশনকারী ছিলেন।
মি. প্রিগোশিনকে প্রায়শই "পুতিনের শেফ" হিসাবে উল্লেখ করা হয় কারণ ওয়াগনার গ্রুপ প্রতিষ্ঠার আগে মি. পুতিন এবং সামরিক বাহিনীকে কেটারিং পরিষেবা দিয়ে তিনি প্রথমবার পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন।
এখন ইউক্রেন যদি যুদ্ধক্ষেত্রে আরও বেশ অগ্রগতি অর্জন করে তাহলে আরও বেশি সংখ্যক রুশ নাগরিক ঐ যুদ্ধের ব্যাপারে মি. প্রিগোশিনের সমালোচনাতে বিশ্বাস আনতে শুরু করবেন বলে মি. বার্নস মনে করছেন।
সিআইএ প্রধান বলেন, রুশ অভিযানটি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চেয়েও সবল ছিল এবং প্রস্তুতি নিতে রুশদের কয়েক মাস সময় হাতে ছিল। সুতরাং, অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ এখন “কঠিন কাজ" বলে প্রমাণিত হচ্ছে।
"এতে অনেক সময় লাগবে এবং অগ্রগতি অর্জনও সহজ কাজ হবে না। তবে আমি একজন আশাবাদী মানুষ," মি. বার্নস মন্তব্য করেন।