২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:২৬:২০ অপরাহ্ন


যেসব আমলের জন্য জুমার দিন শ্রেষ্ঠ
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৭-২০২৩
যেসব আমলের জন্য জুমার দিন শ্রেষ্ঠ ফাইল ফটো


জুমার দিন। গরিবের হজের দিন। ঈমানদারের ঈদের দিন। ঈমান বৃদ্ধির দিন। মুমিনের আনন্দ-উৎসবের দিন। এ দিন ছোট-বড় সবাই আনন্দের সঙ্গেই জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে হাজির হয়। এ আনন্দে শরিক হয় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও। জুমার দিনের এ এক মনোরম দৃশ্য। দিন বেশ কিছু কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ। সে কাজগুলো কী?

এ দিন জোহরের সময় জুমার নামাজ পড়া ফরজ। আল্লাহ তাআলা এদিন আজানের সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ রেখে দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে তরা করো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝ।’ (সুরা জুমা: আয়াত ৯)

জুমার দিন ও এ দিনের নামাজ সম্পর্কে হাদিসে অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। জুমার দিনের ঘোষিত শ্রেষ্ঠ বিশেষ কাজগুলো হলো-

১. সর্বোত্তম দিন: জুমার দিন সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন জুমার দিন। এদিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। এদিন তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। এদিনই  কেয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)

২.  ঈমানদারের মিলন মেলার  দিন: এদিনটির মধ্যে জুমার নামাজ রয়েছে। যা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের মিলনমেলার দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়া জুমার নামাজ ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন।’ (মুসলিম)ৎ

৩. দোয়া কবুলের দিন: জুমার দিনে একটি মুহূর্ত রয়েছে যে মুহূর্তে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। তবে মুহূর্তটিকে অজ্ঞাত করে রাখা হয়েছে। যাতে মানুষ পুরো জুমার দিনটিকে গুরুত্বসহকারে অনুসন্ধান করতে থাকে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো বান্দাহ ঐ মুহূর্তে দাড়িয়ে সালাতরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তা অবশ্যই দিবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সময়টি কখন?

এ ব্যাপারে মতভেদ আছে। তবে হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো দুটি-

> ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত।’ (মুসলিম, ইবনু খুজাইমা, বয়হাকি)

> যাদুল মাআদ-এ বর্ণিত আছে- মুহূর্তটি হচ্ছে জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর।

৪. দান করার দিন: অন্যান্য দিনের তুলনা জুমার দিন সাদকা করা তেমন উত্তম, যেমন সারা বছর সাদকা করার চেয়ে রমজানে সাদকা করা উত্তম।

হজরত কাব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘জুমার দিনই সাদকা করা অন্যান্য দিন সাদকা করার তুলনায় অধিক সওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ। (মুসলিম)

৫. আল্লাহর দিদার পাওয়ার দিন: জুমার দিন জান্নাতিদের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা সাক্ষাৎ করবেন। তাফসিরে এসেছে- আল্লাহ তাআলা  প্রতি জুমার দিন  জান্নাতিদের সাক্ষাতের জন্য প্রকাশ্যে আসবেন।

৬. ঈদের দিন: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এটি ঈদের দিন। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি জুমার নামাজে উপস্থিত হয়, সে যেন অজু করে উপস্থিত হয়।’ (ইবনু মাজাহ)

৭. গুনাহ মাফের দিন: এদিন আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাপ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন-

> গোলস করলো,

> যথাযথ পবিত্রতা অর্জন করলো,

> তেল লাগালো এবং ঘর থেকে আতর-খুশবু লাগিয়ে বের হলো,

> দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে গেলো না,

> এরপর তার তকদিরে যত নামাজ পড়া নির্ধারিত ছিল তা পড়লো,

> ইমামরে খুতবার সময় চুপ থাকলো,

তাহলে তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহসমূহ মাপ করে দেওয়া হবে। (বুখারি)

৮. রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব পাওয়ার দিন: জুমার দিনের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে সওয়াবের ভাণ্ডার। যারা যথাযথ আদব রক্ষা করে জুমার নামাজ আদায় করে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তাদের জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব লিখা হয়।

হজরত ইবনে আউস আস সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, আগে আগে মসজিদে যায় এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (কোন কিছুতে আরোহণ না করে), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, কোনো কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।’ (মুসনাদে আহমাদ)

৯. জাহান্নামের আজাব বন্ধ রাখার দিন: এ দিন জাহান্নামের দিনকে প্রজ্জলতি রাখা বন্ধ রাখে। যাদুল মাআদে এসেছে- সপ্তাহের প্রতিদিন জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। জুমার দিনের সম্মানে এদিনকে প্রজ্জলিত করা বা উত্তপ্ত করা বন্ধ রাখা হয়।

১০. জুমার দিন বা রাতের মৃত্যুবরণ শুভ লক্ষণ:  এ দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করা উত্তম পরিণতির লক্ষণ। কারণ এদিন বা রাতে যে ব্যক্তি মারা যায় সে ব্যক্তি কবরের আজাব বা মুনকার নকীরের প্রশ্ন থেকে বেঁচে যায়।

হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিম জুমার দিন  বা জুমার রাতে মারা গেল; আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিন ও নামাজের ফজিলতগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।