০৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৯:১৯:২৯ পূর্বাহ্ন


রাজশাহীতে অতি মুনাফার ফাঁদ পেতে এমটিএফই অ্যাপের অভিনব প্রতারণা
ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৭-২০২৩
রাজশাহীতে অতি মুনাফার ফাঁদ পেতে এমটিএফই অ্যাপের অভিনব প্রতারণা ফাইল ফটো


রাজশাহীতে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে টাকা বিনিয়োগ করে অ্যাপের ফাঁদে পড়েছে হাজারও মানুষ। রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন অ্যাপে বিনিয়োগ করে কেউ হয়েছে প্রতারণার শিকার, আবার কেউ হয়েছে রাতারাতি কোটিপতি। 

তবে এইসকল প্রতারণা মূলক অ্যাপের প্রচারকারিদের বিরুদ্ধে বা অ্যাপ বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এ কারনে অফিস খুলে বিভিন্ন অ্যাপে বিনিয়োগ করে দ্রুত কোটিপতি হওয়া যায় বলে, একটি প্রতারক চক্র মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানান গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে (ফেইসবুক) নিউজ ফিডে প্রতারণার বিভিন্ন অ্যাপের এ্যড দেখা যায়। এর মধ্যে রাজশাহীতে বর্তমানে জনপ্রিয়তার র্শীষে রয়েছে এমটিএফই নামের একটি অ্যাপ। এ অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করলে দ্রুত কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বিভিন্ন গুপে বিভক্ত হয়ে মানুষের কাছে প্রচার করছে কিছু প্রতারক। এমটিএফই এ অ্যাপের রাজশাহীতে অফিস নিয়ে বসেছে রাজশাহীর লক্ষিপুরে রাজপাড়া থানাধীন চন্ডিপুর এলাকার সবুজ নামের এক যুবক। 

কোন সরকারি বৈধতা নেই, কোন অনুমোদন নেই, এমন বিদেশী অ্যাপের নামে অফিস খুলে কিছু বেকার যুবককে চাকরি দিয়ে “দ্রুত কোটিপতি হাওয়ার সুযোগ/ দ্রুত বড়লোক হওয়ার উপায়” এমনসব প্রচার ও প্রচারণা করে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করান তিনি।

তার র্দীঘদিন যাবত এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে রাজপাড়া এলাকার সবুজসহ আরও অনেকে। তাদেও প্রচার ও প্রচারণায় রয়েছে শতাধিক গুপ। প্রতিটি গুপে শতাধিক মানুষ তাদের কথা মতো অ্যাপের ফাঁদে পা দিয়েছে। করেছেন লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ। বাংলাদেশি টাকাকে ক্রিপটো ডালারে রুপান্তরিত করে এই অ্যাপে বিনিয়োগ করা হয়। এতে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। 

বিভিন্ন অ্যাপে ঝুকি নিয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে রাজশাহীর হাজারো তরুন। রাতারাতি কোটিপতি হয়ে উঠার নেশায় এমটিএফই অ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপে ঝুকি নিয়ে টাকা বিনিয়োগ করে এ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছে, এইসব অ্যাপের সাথে জড়িতো কিছু যুবক। অ্যাপের মাধ্যে একাউন্ট চালু করার সময় ৫০০ ডলার সমপরিমান বাংলাদেশের টাকা বিনিয়োগ করতে হয় অ্যাপের প্রতিনিধিগনের মাধ্যমে। তার পরে সপ্তাহে লাভ বাবদ ২ হাজার হতে ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয় মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। উল্লেখিত লাভের আশায় রাজশাহীর হাজরো তরুন টাকা বিনিয়োগ করছে।

এমনকি সকল সম্পদ বন্ধক ও বিক্রিয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা লাভের আশায় অ্যাপের ডলার করে নিচ্ছে। সরকারের অনুমোদন না থাকলেও কবে কখন অ্যাপ গুলি বন্ধ হয়ে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ গুলির মধ্যে এমটিএফই অত্যন্ত বিপদজনক ও ঝুঁকি পূর্ন হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক সমাজের মানুষেরাও এই এমটিএফই অ্যাপে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে।

অ্যাপের মাধেমে অনেকে আবার লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেও রয়েছে অতংঙ্কে, কখন বন্ধ হয়ে যায়। তবে এসব বিভিন্ন অ্যাপের প্রচারকারি যুবকরা একসময় দরিদ্র থাকলেও বর্তমানে হটাৎ কোটিপতি হয়ে গেছে। করেছেন বাড়ি গাড়ি। আর অর্থ বিনিয়োগ করে কেউ হয়েছে প্রতারণার শিকার, হায়েছেন পথের ভিক্ষারী। এমটিএফই অ্যাপের প্রচারকারি এক যুবকের নাম রুবেল। তার বাড়ি দূর্গাপুর। সে রাজশাহী আরডিএ মার্কেটে এক দোকানের কর্মচারি ছিল। সে রাজশাহীসহ দূর্গাপুরের শতাধিক মানুষকে এমটিএফই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করিয়ে হটাৎ কোটিপতি হয়েছে। একসময় তিনি কাঠ মিস্ত্রী ছিলেন। তবে বর্তমানে তার বাড়ি গাড়ি সব হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এমটিএফই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করা একাধিক যুবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কোন পরিচিত মানুষ ওই অ্যাপের প্রতিনিধি হয়ে তাদের কে প্রলোভন দিয়েছে, অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন ২ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ হবে ও পাওয়া যাবে। তার মাধ্যমে টাকা দিলে তাদের একটি একাউন্ট খুলে দেয়া হয়। পরে সারাদিনে ৩০ মিনিট ওই অ্যাপ খুলে বসে থাকতে হয়। সে খানে তাদের নিজ নিজ একাউন্টে কিছু পয়েন্ট ডলার হিসাবে জামা হয়। মাঝে মাঝে টাকাও তুলতে পারে তারা। আবার আতংঙ্কেও রয়েছে হটৎ অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে দায়ভার কে নিবে।

এমটিএফই অ্যাপে প্রচারকারি দূর্গাপুর উপজেলার রুবেল বলেন, আমার মাধ্যমে যদি কেউ অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করে তার কিছু কমিশন আমার একাউন্টে জামা হয়। বেশি টাকা বিনিয়োগ করলে বেশি কমিশন পাবো। এমন ভাবে যদি ১০০ জনকে বিনিয়োগ করতে পারি তাহলে আমি অফিস পাবো ও আমার পদ সিও হবে। এইভাবেই হটাৎ কেউ লাখ লাখ টাকার মালিক হচ্ছে। তবে অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে দায়ভার তারা কেউ নিবে না বলেও জানান তিনি।

রাজশাহীতে এমটিএফই অ্যাপের অফিস খুলে বসে প্রচারকারি নগরীর রাজপাড়া মহল্লার সবুজ সাংবাদিকদের এমটিএফই অ্যাপের বিষয়ে বলেন, এমটিএফই অ্যাপের অফিস ও বলতে পারেন আবার আমার চেম্বারও বলতে পারেন। সারা বাংলাদেশে অ্যাপের প্রায় ৯ জন সিও রয়েছে। কাউকে জোর করে ওই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করতে বলা হয়নি। তবে একজন বেকার যুবক যদি একটি কর্মপায় তাহলে আমাদের ভালো। তবে যে কোন সময় অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে তার দায়ভার কে নিবে ও অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করে লাভ হবে মানুষের মাঝে এমন প্রচারের কোন অনুমোতি রয়েছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন অনুমোতি নেই। অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলেও কেউ দায়ভার নেবে না বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, কিছু অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেছে। এনিয়ে আমরাও বিভ্রান্তের মধ্যে পড়েছি। তবে এসব বিদেশী অ্যাপে মানুষকে টাকা বিনিয়োগ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউকে জোর করে টাকা বিনিয়োগ করার করা বলছি না। এসময় তিনি এতো কথা ফোনে বলার সময় নেই বলে সাংবাদিককে তার অফিসে চা খাওয়ার জন্য যেতে বলে ফোন কেটে দেয়।

সাম্প্রতিক, রাজশাহীর দাশমাড়ি এলাকার সবুজ, লিটন, এখলাসসহ কিছু যুবক আলটিমা উইলেট নামের একটি অ্যাপে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করে তার এলাকার মুনায়েম নামের এক বন্ধুর কথা মতো। দুই একবার ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়েছে তারা। হটাৎ অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়। এনিয়ে বোয়ালিয়া থানায় গত ২৬ জুন সবুজ আলী বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে ওই অ্যাপের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ৬ জনকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে। এর আগেও রাজশাহীতে মুভিপ্লান, অ্যামাজন ইমপেরিয়াল ক্রাইন নামের ২টি অ্যাপে মানুষ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছে। মুভি অ্যাপের রাজশাহীর নগরীর শিরোইলে অফিস খুলে বসে ছিলেন মানিক নামের এক প্রতারক এবং অ্যামাজন ক্রাইন নিয়ে কাদিরগঞ্জের একটি ফ্লাটে অফিস খুলে বসেছিলেন জৈনিক বাবু নামের এক প্রতারক। এই ২টি অ্যাপে মহানগরীর সাধুরমোড়, টিকাপাড়া, হাদিরমোড়, সাগরপাড়া, হোসনিগনঞ্জ, তালাইমাড়ী ও গোদাগাড়ীর প্রেমতলী এলাকার শতাধিক মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয় হটাৎ অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে। ওই ঘটনায় আরএমপি চন্দ্রীমা থানাও বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে কিছু আসামী গ্রেফতার হয়, আর সিংহভাগ প্রতারক দেশের বাইরে পালিয়ে যায়।

এ বিষয় আরএমপি পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, এসব অ্যাপের কোন দেশে অনুমোদন নেই। এসব অ্যাপের মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব বিষয় প্রতারণার শিকার হয়ে যদি কেউ অভিযোগ দেই তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বিষয়টি আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে জানিয়ে দ্রুত এ বিষয় ব্যবস্থা গ্রহণ নেয়ার জন্য বলা হবে।