নাটোরের গুরুদাসপুরে ইউপি সদস্য ছেলের নির্যাতন সইতে না পেরে অন্যের বাড়ীতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্বামী হারা এক বৃদ্ধা মা। ভিটেমাটি ও বাগানবাড়ী ফিরে পেতে আকুতি করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেই বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগমের বয়স প্রায় ৬৫ বছর। গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব মামুদপুর গ্রামের মৃত শুকুর আলীর সহধর্মিনী। খালেক মন্ডল ও শমসের মন্ডল নামে তার দুই ছেলে আছে। হালিমা, ছাহেলা ও শায়লা নামে তিন মেয়ে সন্তানও আছে। নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করায় বাড়ী ছাড়তে হয় বড় ছেলেকে। তিন মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছোট সন্তান সমশের মন্ডলকে নিয়ে তার নিজ নামীয় ভিটায় তিনঘর বিশিষ্ট বাড়ীতে থাকতেন বৃদ্ধা সুফিয়া। সুখেই ছিলেন তিনি। হঠাৎ ছোট সন্তান অর্থলোভী হয়ে উঠে। মায়ের নামীয় সম্পত্তির ওপর নজর পড়ে তার। নিজ নামে লিখে নিতে মায়ের উপর চাপ দেয়। এক পর্যায়ে মা জমি লিখে না দেয়ায় মাকে মারধর করে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। ঘটনাটির প্রায় আট মাস অতিবাহিত হয়েছে। এরপর থেকে স্থানীয়দের কাছে ধরনা দিয়েও কোন সমাধান না পেয়ে থানায় যান ওই বৃদ্ধা। তিনি সেখানে পর পর তিনবার অভিযোগ দিয়েছেন। তাতেও কোন কাজ হয়নি। এরপর তিনি আদালতে যান। সেখানেও চক্রান্তের শিকার হন সুফিয়া বেগম। স্থানীয় চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মিমাংসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদালত থেকে জামিন নেন। এরপর আর কোন খবর নেই। কৌশলে বৃদ্ধা মায়ের লিচু বাগান ও বাড়ী ব্যাংকে মর্গেজ রেখে ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করে নেয় ছেলে সমশের মন্ডল। তিনি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার।
বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম আকুতি করে বলেন, আমার জমি ও বাড়ী লিখে না দেয়ায় মেম্বার ছেলে মারপিট করে। আট মাস পূর্বে একরাতে ওই ছেলে এবং তার বউ গলায় হাসুয়া ঠেকিয়ে হত্যা করতে লেগেছিল। পরদিন জমি লিখে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ছেড়ে দেয়। তারা ঘুম থেকে ওঠার আগেই জীবনের ভয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছি। এখন আরেক ছেলের শ্যালকের বাড়ী মামুদপুর দক্ষিণপাড়া এলাকাতে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
অভিযুক্ত ছোট ছেলে সমশের আলী মেম্বার বলেন, মায়ের অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। বাড়ী তার। তবে তার বাগান বাড়ী মর্গেজ রেখে ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকা উঠানো হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, কোর্ট থেকে জামিন করা হয়েছে। জমি ও বাগান বাড়ী ফিরিয়ে দিতে সমশেরকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনাটি তার জানা নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজশাহীর সময় / এম আর