২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৪০:৩৭ পূর্বাহ্ন


সেপ্টেম্বর থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৭-২০২৩
সেপ্টেম্বর থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা File Photo


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ সহিংসতার দিকে বাড়ছে গোয়েন্দা নজরদারি 

আগামী সেপ্টেম্বর ঘিরে সতর্ক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। ওই মাস থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী কর্মকান্ড শুরুর ঘোষণার কারণে নানামুখী প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে সতর্ক করা হচ্ছে রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, জেলাসহ সব ইউনিটকে। এ ছাড়া চলতি মাসেই বাংলাদেশ সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ সফরের সময় নিরাপত্তা নি-িদ্র করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন। বৈঠকগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ কৌশল নির্ধারণের বিষয়গুলোও উঠে আসছে। আলোচনায় উঠে আসছে কর্মকর্তা রদবদলের বিষয়টিও।

গত শুক্রবার সুনামগঞ্জে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কমিশন যে আদেশ দেবে পুলিশ সে অনুযায়ী কাজ করবে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে পুলিশের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতিও আছে।  জানা গেছে, ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনীতে নির্বাচনমুখী রদবদল শুরু হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বিষয়টি পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ করতে চান নীতিনির্ধারকরা। এতে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত আদর্শ ছাড়াও দেশের বাইরে তার নিজের কিংবা পরিবারের সদস্যদের সম্পদ রয়েছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আবার কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তান বিদেশে অবস্থান করলে সে ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে পদোন্নতি, বদলি এবং পদায়নের ক্ষেত্রে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, নানা কারণে দলীয় মতাদর্শের বাইরেও এবার অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ এবং ভালো ইমেজের কর্মকর্তাদের বাছাইয়ের বিষয়ে মত দিয়েছেন নীতিনির্ধারকদের অনেকেই।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার কারণে জামায়াতে ইসলামী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শোডাউন করছে। জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আগামী সেপ্টেম্বরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। গোয়েন্দারা বলছেন, এসব রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যবহার করে নাশকতার চেষ্টায় লিপ্ত দেশি-বিদেশি নানা কুচক্রী মহল। এসব বিষয় প্রতিহত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একাধিক প্রতিবেদন দিয়েছে সংস্থাগুলো। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সিটিটিসির একটি প্রোগ্রামে বলেছেন, ১০ থেকে ১২ বছর ধরে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বড় ধরনের কোনো সংকট হয়নি। সামনে অনেক বড় সংকট আসতে পারে। সেগুলো মোকাবিলা করতে ইউনিফর্মধারী পুলিশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।  একাধিক সূত্র বলছে, নানা কারণে চলতি মাসের দিকে তীক্ষè নজর রাখছে সরকারের উচ্চ পর্যায়সহ নানা মহল। সব কিছু আমলে নিয়েই সরকার পুলিশ প্রশাসনকে প্রস্তুত করছে। ইতোমধ্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের বাছাইয়ের কাজও শুরু হয়েছে। কিছু জায়গায় পদায়নও করা হয়েছে। নতুন পদায়ন করা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা যারা যোগ্য মূলত তাদেরই বাছাই করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেপ্টেম্বর নয়, কেবল কূটনীতিকদের জন্য নয় জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি সব সময়েই আমাদের কাছে মুখ্য বিষয়। এ ছাড়া ঈদসহ দিবসকেন্দ্রিক আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা আয়োজন থাকে। ঈদকেন্দ্রিক ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। এ জন্য আমরা প্যাট্রোল জোরদার করেছি। আমাদের কথা পরিষ্কার। অপরাধী যেই দল কিংবা গোষ্ঠীর সদস্যই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।  তিনি আরও বলেন, আমাদের সাইবার ওয়ার্ল্ডে সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলছে। যারা ইস্যু তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করবে, জনজীবন বিপন্নের চেষ্টা করবে তাদের শনাক্ত করে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

 

ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতি চেয়েছে পুলিশ : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, পুলিশের প্রস্তাব অনুযায়ী পুলিশ সদর দফতর ১৫তম বিসিএস ব্যাচের ১৬ অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-১-এ পদোন্নতি চেয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ সদর দফতর ১৭তম বিসিএস ব্যাচের ৩৪ উপমহাপরিদর্শককে অতিরিক্ত আইজিপি, ২২তম ব্যাচের ১৫৭ অতিরিক্ত ডিআইজিকে ডিআইজি, ২৪তম ব্যাচের ২৬৬ জন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের ২৪৭ অতিরিক্ত এসপিকে এসপি হিসেবে পদোন্নতির প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাব পাওয়ার পর তা মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ছয়জন কর্মকর্তা পুলিশ সদর দফতরে এবং অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ১০ কর্মকর্তাকে সিআইডি, পুলিশ টেলিকম, রেলওয়ে ও হাইওয়ে পুলিশ, পিবিআই, শিল্প পুলিশ, সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট (এটিইউ), সারদা পুলিশ একাডেমি, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া পুলিশ সদর দফতর ১৭তম বিসিএস ব্যাচ থেকে ৩৪ জন ডেপুটি আইজিপিকে অতিরিক্ত আইজিপি, ২২তম ব্যাচের ১৫৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজিকে ডিআইজি পদে, ২৪তম ব্যাচের ২৬৬ জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২৮তম ও ২৯তম ব্যাচ থেকে ২৪৭ জন অতিরিক্ত এসপিকে এসপি হিসেবে পদোন্নতি দিতে প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসব পদোন্নতি দেওয়া হলে সরকারের বছরে ২ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে।