মানুষ জীবিত থাকতে তিনটি আমল জারি করে যাওয়া জরুরি। কারণ এ তিন আমল চালু থাকলে মৃত্যুর পরও আমলনামায় সওয়াব যোগ হতে থাকবে। সওয়াবের এ ধারা বন্ধ হবে না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং এ তিনটি আমলের প্রতি তাঁর উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। আমল তিনটি কী?
মানুষ মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি কাজের সওয়াব কখনো বন্ধ হয় না। হাদিসের বর্ণনায় বিষয়টি এভাবে ওঠে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল ছাড়া (যা কখনো বন্ধ হয় না তাহলো) সাদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়, এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম ১৬৩১, নাসাঈ ৩৬৫১, আবু দাউদ ২৮৮০, তিরমিজি ১৩৭৬)
১. সাদকা জারিয়াহ
এমন দান-অনুদান; যার সওয়াব চলমান থাকে। যা কখনো বন্ধ হয় না। দানকারীর মৃত্যুর পরও এ দানের সওয়াব চলতে থাকে। এর উদাহরণ কী?
সাদকায়ে জারিয়া হলো- ঐ দান, ব্যক্তির মৃত্যুর পরও যেই দানের সওয়াব অব্যাহত থাকে। পক্ষান্তরে যে সাদকার সওয়াব অব্যাহত থাকে না; যেমন- গরীবদের খাওয়ানো। এটি সওয়াবের কাজ কিন্তু এটি সাদকায়ে জারিয়া নয়। এভাবে রোজাদারকে ইফতার করানো, এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ ও বৃদ্ধাশ্রমের পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করা। যদিও এটি সাদকার অন্তর্ভুক্ত কিন্তু এগুলো সাদকায়ে জারিয়া নয়।
তবে আপনি এতিমদের জন্য কিংবা বৃদ্ধদের জন্য ঘর নির্মাণে অংশ গ্রহণ করতে পারেন; তাহলে সেটা সদাকায়ে জারিয়া হবে। যতদিন এ ঘরের উপযোগিতা থাকবে ততদিন আপনি এ সাদকার সওয়াব পেতে থাকবেন।
সাদকায়ে জারিয়ার উদাহরণ হলো-
> মসজিদ নির্মাণ করা।
> গাছ লাগানো। যেটার ফল ও অক্সিজেনের মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে।
> প্রয়োজনীয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য টিউবয়েল, কুপ ও খাল খনন করা।
> মুসহাফ (কোরআনগ্রন্থ) ছাপানো ও বিতরণ।
> ইসলামি বই ছাপানো ও বিতরণ করা।
> মানুষের উপকারে রাস্তা-কালভার্ট-ব্রীজ নির্মাণ করা।
> অন্যকে রক্ত দান করা।
> এতিমের লালন-পালনের দায়িত্ব নেওয়া।
> কোরআন শিক্ষা দেওয়া বা কোরআন শিক্ষা ব্যবস্থাপ করে দেওয়া।
> অসহায় দুঃস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থায় হাসপাতাল নির্মাণ কিংবা চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়া।
> কবরস্থানের জন্য জমি দান করা কিংবা জমি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা করা।
> মৃতদের সৎকারের খরচ জোগানো কিংবা বহনের জন্য এ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ে সাহায্য করা।
> অত্যাচারিত মুসলমান সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানো।
২. এমন ইলম: যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে
এমন ইলম যা সে বই আকারে লিখে যায়। আর তা পড়ে মানুষ উপকৃত হয়। এতে ওই ব্যক্তির আমলনামায় সওয়াব যোগ হতে থাকে। যতদিন এ ইলমের ধারা চলতে থাকে ততদিন এর সওয়াবও চলতে থাকে।
৩. নেক সন্তান: যে তার জন্যে দোয়া করতে থাকবে
এমন নেক সন্তান; যে সন্তান তার বাবা-মার মৃত্যুর পরও তার জন্য নিয়মিত দোয়া করতে থাকে। আর এ দোয়ার বরকত, ফজিলত ও সওয়াব তার আমলনামায় যোগ হতে থাকে। বংশ পরম্পরায় যদি নেক সন্তান থেকে যায় তবে কখনো সওয়াব বা প্রতিদান বন্ধ হয় না।
হাদিসের আলোকে জানা যায়, একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পরও তার আমলনামায় নেকি যোগ হতে থাকে, যদি সে শিক্ষা অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেয় ও প্রচার করে, অথবা সৎ সন্তান রেখে যায়, অথবা ভালো বই রেখে যায়, অথবা মসজিদ নির্মাণ করে দেয়, অথবা মুসাফিরের জন্য সরাইখানা নির্মাণ করে, অথবা নদী খনন করে দেয় অথবা জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য সম্পদ থেকে সাদকা করে।
মুমিন মুসলমানের উচিত, এ তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া। যাতে নিজের অর্জিত সম্পদ এমন কাজে ব্যয় হয়; যা তার মৃত্যুর পরও সওয়াবের কাজে পরিচালিত হয়। এমন ইলম শেখা এবং শেখানো যার ধারাবাহিকতা যেন কেয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকে। আর এমন নেক সন্তান জন্ম দেওয়া; যারা বংশ পরম্পরায় নিজ নিজ বাবা-মা বংশধরদের জন্য দোয়া করতে থাকে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ তিনটি আমল বেশি বেশি করার প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।