ছবিমুক্তির পর ওম রাউত পরিচালিত ‘আদিপুরুষ’ ছবি নিয়ে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে বিতর্ক। কখনও পৌরাণিক চরিত্রের বেশভূষা নিয়ে, কখনও বা দুর্বল সংলাপের বাঁধন নিয়ে। কিন্তু শত বিতর্কের মাঝেও দর্শকের নজর কেড়ে নিয়েছেন ত্রুপ্তি তোরদমল। ‘আদিপুরুষ’ ছবিতে বিভীষণের স্ত্রী সরমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
‘আদিপুরুষ’-এ অভিনয়ের মাধ্যমেই বলিপাড়ায় পদার্পণ ত্রুপ্তির। ওম রাউতের ছবিতে সীতার চরিত্রের পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে সরমার চরিত্রটিও। ছবিতে দেখানো হয়েছে সঞ্জীবনীর ঠিকানা জানেন একমাত্র সরমা। তাই পুরুষ চরিত্রের ভিড়ের মাঝেও বিভীষণের স্ত্রীকে চিত্রনাট্যে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
মডেলিং থেকে থিয়েটার, তার পর দক্ষিণী ফিল্মজগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া— ৩০ বছর বয়সে অভিনয়জগতে নিজের পরিচিতি গড়ে ফেলেছেন ত্রুপ্তি।
১৯৯২ সালের ২২ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম ত্রুপ্তির। বাবা-মা এবং দুই বোন-সহ মুম্বইয়ে থাকতেন তিনি। তাঁর বাবা মধুকর তোরদমল মরাঠি ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা। লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ছত্রপতি শিবাজির বংশধর হলেনত্রুপ্তির মা প্রমীলা ঘোরপাড়ে।
মুম্বইয়েই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন ত্রুপ্তি। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা পাস করেন তিনি। স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ত্রুপ্তি। কিন্তু সে পথে বাধা আসে।
স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে কোনও ভাল কলেজে পড়ার সুযোগ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সাহিত্য নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন ত্রুপ্তি। কলেজে থাকাকালীন পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয়ের প্রতিও আগ্রহ বাড়তে থাকে তাঁর।
কলেজে পড়াকালীন থিয়েটারে অংশগ্রহণ করতেন ত্রুপ্তি। থিয়েটারে অভিনয় করেই নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন তিনি। বিনোদনজগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ত্রুপ্তি।
মডেলিংয়ের মাধ্যমে কেরিয়ারে যাত্রা শুরু করেছিলেন ত্রুপ্তি। জনপ্রিয় সংস্থার বিজ্ঞাপনের মুখ হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। এমনকি, বিভিন্ন মরাঠি পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য ফোটোশুটও করেছিলেন তিনি।
পত্রিকার জন্য ত্রুপ্তির সাহসী ফোটোশুট নজর কাড়ে। ২০১৮ সালে মরাঠি ছবিতে প্রথম অভিনয়ে আসেন ত্রুপ্তি। এক বলি অভিনেতার হাত ধরে অভিনয় শুরু করেছিলেন ত্রুপ্তি।
২০১৮ সালে ‘সবিতা দামোদর পরাঞ্জপে’ নামের মরাঠি ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন বলি অভিনেতা জন আব্রাহম।
মরাঠি ছবির জন্য নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন জন। অডিশনের মাধ্যমে ত্রুপ্তিকে পছন্দ হয় তাঁর। ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য ত্রুপ্তিকে প্রস্তাবও দেন তিনি। জনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান অভিনেত্রী।
ত্রুপ্তির অভিনয় মনে ধরে দর্শকের। প্রথম ছবি মুক্তির এক বছরের মাথায় ‘ফত্তেশিকস্ট’ নামের আরও একটি মরাঠি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান ত্রুপ্তি। এই ছবিতেও তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়।
ত্রুপ্তি বলেন, ‘‘আমি যখন নিজের মনে সংলাপ আওড়ে চলেছি, তখন দেখি সেটে প্রভাস ঢুকছেন। আমি ভেবেছিলাম, আমি যদি নিজে থেকে ওঁর সঙ্গে আলাপ করতে যাই তা হলে খারাপ দেখাবে। তাই আমি যাইনি। কিন্তু কিছু ক্ষণ পর দেখি প্রভাস আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। এত বড় অভিনেতা হয়েও নিজে থেকে আমার সঙ্গে আলাপ করে গিয়েছিলেন তিনি।’’
শুটিংয়ের সময় নাকি সংলাপ ভুলে গিয়েছিলেন ত্রুপ্তি। সেই ঘটনা উল্লেখ করে অভিনেত্রী সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘প্রথম দৃশ্য প্রভাসের সঙ্গে শুট করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে আমার একারই সংলাপ ছিল। সমস্ত সংলাপ আমার ঠোঁটে লাগা। কিন্তু প্রভাসকে সামনে দেখেই সব কেমন গুলিয়ে গেল।’’
ত্রুপ্তি বলেন, ‘‘আমি হঠাৎ খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বুক ধড়ফড় করছিল। খালি মনে হচ্ছিল আমি সব গন্ডগোল করে ফেলব। শেষে ওম এবং প্রভাস দু’জনেই আমাকে সাহস দেন। তার পর খুব সহজেই আমি প্রথম শট সেরে ফেলি।’’
ত্রুপ্তি জানান, বড় মাপের অভিনেতা হয়েও প্রভাসের মধ্যে কোনও রকম অহঙ্কার নেই। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘প্রভাসের আচরণ ভীষণ নম্র। এত বড় অভিনেতা হয়েও ওঁর পা সবসময় মাটিতেই থাকে।’’
ইতিমধ্যেই নিজস্ব অনুরাগী মহল তৈরি করে ফেলেছেন ত্রুপ্তি। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী সংখ্যা চল্লিশ হাজারের গণ্ডি পার করে ফেলেছে। অভিনয়ের পাশাপাশি নাচ এবং শরীরচর্চা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন অভিনেত্রী।