‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হলো, এরপর মৃত্যুবরণ করলো, কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য হজের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হলো, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হলো, কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ওমরার সওয়াব লেখা হবে।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা ৬৩৫৭)
হিজরি বছরের শেষ মাস জিলহজে ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ দিনগুলোতে হজের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। হজ উপলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিশু, কিশোর, যবুক, বৃদ্ধ লাখো মুসলিম নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। লাখো মানুষের পূণ্যের এ মহাসম্মিলনে অনেক মানুষ মৃত্যু বরণ করেন। এ মৃত্যু নিয়ে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন সুসংবাদ।
হজ ও ওমরায় গমন করা হলো আল্লাহর নির্দেশ পালন করা। ধর্মপ্রাণ মুসলমান যখন পবিত্র নগরী মক্কা কিংবা মদিনায় অবস্থান করেন, তখন তারা হয়ে যান আল্লাহর মেহমান। আল্লাহর মেহমান থাকা অবস্থায় কারো মৃত্যু হলে নিশ্চিত সে মৃত্যু কল্যাণের। এ মৃত্যুবরণ সম্পর্কে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুসংবাদ দিয়ে ঘোষণা করেন-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। এরপর সে মারা গেছে, তার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত হজের নেকি লেখা হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে; এরপর সে মারা গেছে, তার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত ওমরার নেকিও লেখা হতে থাকবে।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা ৬৩৫৭, তারগিব ওয়াত তারহিব)
২, হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। সে সময় ইহরাম অবস্থায় এক ব্যক্তি হঠাৎ উটের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড় ভেঙে মারা যায়। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা সিদ্ধ পানিতে কুল গাছের পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও এবং তাঁর ইহরামের কাপড় দু’টি দিয়ে কাফন দাও। তবে তার শরীরে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কেয়ামতের দিন তাকে (ইহরামকারী মৃতব্যক্তিকে) তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় ওঠাবেন। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
হজের সফরে মৃত ব্যক্তির জন্য দুঃখ নয়; বরং এটা তার জন্য মহা খুশির সংবাদ। কারণ হজের সফরের মৃত ব্যক্তিকে ইহরামের পোশাকেই দাফন করা হবে। আর কেয়ামতের দিন ইহরামের পোশাকেই তালবিয়া পাঠ করতে করতে সে হাজির হবে।
উল্লেখ্য যে- প্রতি বছরই হজের সময় সৌদি আরবের মক্কা বা মদিনায় অবস্থানকালে অনেক হজযাত্রী মারা যায়। নিয়ম অনুযায়ী হজ করতে যাওয়া কোনো হজযাত্রী মারা গেলে তার লাশ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় না। আর এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্রে হজের প্রস্ততিকালেই প্রত্যেক হাজিকে সম্মতি দিতে হয়।
হজের সফরে যারা মক্কায় মারা যায় তাদেরকে কাবা শরিফের সন্নিকটে জান্নাতুল মাওলাতে দাফন করা হয়। আর যারা মদিনায় মারা যায় তাদেরকে মসজিদে নববি সংলগ্ন বাকিউল গারকাদে (জান্নাতুল বাকিতে) দাফন করা হয়।
এসব কবরস্থানে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তান, স্ত্রীসহ অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের দাফন রয়েছে। হজ পালনকারীদের কেউ মারা গেলে তাদের দাফন এসব গোরস্থানে হওয়াও সৌভাগ্যের। আর হাদিসের সুসংবাদ তো রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, এ বছরও পবিত্র হজ শুরুর আগেই কাবা শরিফে তওয়াফরত অবস্থায় মাকামে ইবরাহিমের পাশে এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যুবরণ করেন। পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে চলতি বছর মৃত্যু হওয়া বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৩ এ। মঙ্গলবার (২০ জুন) মক্কা বাংলাদেশ হজ অফিস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সে সব হজ পালনকারীকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন, যারা হজের সফরে মৃত্যু বরণ করেছেন। আমিন।