২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:৫৭:৫৭ অপরাহ্ন


আরাফাতের ময়দানে হাজিদের করণীয়
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২৩
আরাফাতের ময়দানে হাজিদের করণীয় ফাইল ফটো


৯ জিলহজ মোতাবেক আগামী ২৭ জুন মঙ্গলবার আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হওয়ার মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে পবিত্র হজ। প্রত্যেক আরবি (হিজরি) বছরের শেষ মাসের ৯ তারিখ হজের জন্য নির্ধারিত দিন। হাদিসের পরিভাষায়- ‘আলহাজ্জু আরাফা’ বা আরাফা-ই হজ। আরাফার ময়দানের হাজিদের জন্য রয়েছে বেশকিছু করণীয়। সেগুলো কী?

সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত আল্লাহর মেহমানরা আরাফাতের ময়দানের বিশ্ব মুসলিম মহাসম্মিলনে একত্রিত হয়। এ দিনে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি মানুষকে গুনাহমুক্ত করে নিষ্পাপ ঘোষণা দেন। এ দিন ও হজ সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আলহাজ্জু আরাফাহ’ অর্থাৎ আরাফাই হজ। ৯ জিলহজ হজ পালনকারীদের জন্য রয়েছে কিছু করণীয়। তাহলো-

১. জিলহজের ৯ তারিখ ফজরের ফরজ নামাজের পর যে যেখানে থাকবে সেখানে থাকা অবস্থায়ই তাকবিরে তাশরিক পড়বে। তাকবিরে তাশরিক ১৩ জিলহজ আসরের ফরজ নামাজ পর্যন্ত পড়া ওয়াজিব। তাকবিরে তাশরিক হলো-

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।’

অর্থ : ‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ মহান।’

২. তাকবিরে তাশরিক পড়ার পর তালবিয়া পড়া। পুরো তালবিয়াকে ৪ নিঃশ্বাসে ৩ বার পাঠ করা-

তালবিয়া হলো-

لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ - لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ - اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ - لاَ شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ: লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক, লা শারিকা লাক।

অর্থ: ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সব প্রশংসা ও সম্পদরাজি তথা নেয়ামত আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও আপনার। আপনার কোনো অংশীদার নেই।‘

৩. যে যেখানে থাকবে সেখান থেকে জিলহজের ৯ তারিখ সূর্য ওঠার পর তাকবিরে তাশরিক, তালবিয়া, দোয়া এবং তাসবিহ-তাকবির পড়তে পড়তে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হওয়া।

৪. অবশ্যই জোহরের আগে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া।

৫. আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের কাছাকাছি অবস্থান করা উত্তম।

৬. জোহর ও আসরের নামাজ আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরায় এক সঙ্গে জামাতে নিদিষ্ট শর্তানুসারে আদায় করা ‍উত্তম।

৭. মসজিদে নামিরায় অনুষ্ঠিত জামাতে শরিক হতে না পারলে নিজ নিজ তাবুতে যথাসময়ে জোহর ও আসর নামাজ পড়ে নেওয়া।

৮. মসজিদে নামিরার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ‘বতনে উরানায়’ অবস্থান করা যাবে না।

৯. আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালীন সময়ে তাওবা-ইসতেগফার, তাসবিহ-তাহলিল-তাকবির ও দোয়ার মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করা। কেননা আরাফাতের ময়দানের দোয়াই আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি কবুল করেন।

১০. দুপুরের আগেই সম্ভব হলে আরাফাতের ময়দানে গোসল করে নেওয়া। অন্যথায় ওজু করে নেওয়া।

১১. হজের খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা।

১২. সূর্য ডোবা পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। তবে কেউ যদি সূর্য ডোবার আগে আরাফাতের ময়দান থেকে বের হয়ে যায়, তবে তার কর্তব্য হলো তিনি পুনরায় আরাফাতের ময়দানে ফিরে আসবেন এবং সূর্য ডোবার পর আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন। ফিরে না আসলে ওই ব্যক্তি জন্য দম বা কোরবানি আবশ্যক হয়ে যাবে।

১৩. আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার ও দোয়া করা।

১৪. সূর্য ডোবার পরপরই মাগরিব না পরেই মুজদালিফার উদ্দেশ্যে তালবিয়া পড়তে পড়তে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করা।

১৫. আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করার সময় মুজদালিফায় না পৌছে রাস্তায় মাগরিবের নামাজ পড়া যাবে না। মুজদালিফায় পৌঁছে এক আজান ও আলাদা আলাদা ইক্বামতে মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করা।

১৬. যদি কেউ আরাফাতের ময়দান কিংবা পথে মাগরিবের নামাজ আদায় করে তবে ওই ব্যক্তির জন্য মুজদালিফায় গিয়ে পুনরায় মাগরিবের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ৯ জিলহজ হজের দিনের কাজগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে হজে মাবরূর দান করুন। হজে পালনকারী সবাইকে নিষ্পাপ হিসেবে কবুল করুন। আমিন।