২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫০:৩৬ পূর্বাহ্ন


এক্সপ্রেসওয়ে যাবে হাতিরঝিল হয়ে
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৬-২০২৩
এক্সপ্রেসওয়ে যাবে হাতিরঝিল হয়ে ফাইল ফটো


রাজধানীর হাতিরঝিলের সোনারগাঁও হোটেলের অংশে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওঠানামার জায়গা বা র‌্যাম্প তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর জন্য মূল নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল নকশা অনুযায়ী একটি র‌্যাম্প হাতিরঝিলের মাঝে পড়েছিল। ২০২০ সালে নকশা সংশোধন করে এটি সরিয়ে সড়কের পাশে নিয়ে আসা হয়।

কিন্তু এ ঝুঁকিসহ নানা দিক নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনা চলছিল।

 

ইস্কাটনের বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় হবে সোনারগাঁও লিংক নামের র‌্যাম্পটি। এই র‌্যাম্প নির্মাণে মোট ৪১টি খুঁটি বসাতে হবে। অন্তত দুজন বিশেষজ্ঞ ঝিলে এই খুঁটি বসানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।

 

এ অবস্থায় গত ৮ জুন গণভবনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের আলোচনার পর হাতিরঝিল অংশে র‌্যাম্প নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত ১৮ মে এক্সপ্রেসওয়ের সম্পর্কে সেতু বিভাগের কাছে বিস্তারিত জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে প্রকল্পের এই অংশের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব।

জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনসমক্ষে সব কথা বলার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি সেগুলো করব।’

 

তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানান, ইকবাল হাবিব হাতিরঝিল অংশে র‌্যাম্প নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছেন। হাতিরঝিল প্রকল্পের বিশেষজ্ঞদলের প্রধান ছিলেন তিনি। তাই ২০২০ সালে তাঁর কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়।

সেই পরামর্শ গত বৃহস্পতিবার আবারও তিনি তুলে ধরেন। র‌্যাম্পের নির্মাণকাজ শেষে হাতিরঝিলের সঙ্গে মিল রেখে সেখানে হাঁটার জায়গা ও বাগান করার কথা বলা হয়েছে।

 

এই বিষয়ে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি উপস্থাপনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরা হয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। জামিলুর রেজা চৌধুরীর মৃত্যুর পর এসব নির্দেশনা ও নতুন নকশা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কি না সেটাও এই বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়।

সূত্র বলছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুরান ঢাকার মানুষদের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার পর সোনারগাঁও থেকে মাত্র ১১ মিনিটে বিমানবন্দর যাওয়া যাবে। আর মাত্র ১৪ মিনিটে সাইনবোর্ড এলাকায় পৌঁছা যাবে।

বৈঠক সূত্র বলছে, হাতিরঝিলে র‌্যাম্প করা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আপত্তি জানান। দক্ষিণের মেয়রের কথা ছিল, এখানে র‌্যাম্প হলে পানিপ্রবাহে সমস্যা হবে। 

জবাবে কারিগরি বিশেষজ্ঞরা জানান, জলাধার ভরাট করে একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করা হচ্ছে। তবে কাজ শেষে অতিরিক্ত ভরাট জায়গা পুনরুদ্ধার করা হবে। ফলে শুধু খুঁটির কারণে পানিপ্রবাহে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। 

হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামছুল হক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

সূত্র বলছে, বৈঠকে শামছুল হকও র‌্যাম্পের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁর মত ছিল, ঝিলে র‌্যাম্পের খুঁটি বসলেও ক্ষতি হবে না। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। অনেক দেশেই লেকের ওপর ছোট ছোট খুঁটি বসিয়ে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

র‌্যাম্পের কারণে হাতিরঝিলের কোনো ক্ষতি হবে কি না, কালের কণ্ঠ’র এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, ‘এটা মূল হাতিরঝিলের অংশ নয়। দুইটা ছোট কালভার্ট দিয়ে পাশের খণ্ডিত যুক্ত জলাধার। প্রধানমন্ত্রী সেই জায়গায় সব জলাধার অক্ষত রাখতে কঠোর অনুশাসন নিয়েছেন। সে অনুযায়ী যদি কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়, তাহলে ক্ষতি হবে না।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতিরঝিলের যে অংশে আগে বিজিএমইএ ভবন ছিল, সেখানে র‌্যাম্পের অংশ নির্মাণের জন্য ভরাট করা হয়েছে। এক পাশে খুঁটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। রেললাইন ও হাতিরঝিল ঘেঁষে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা কাজে ব্যস্ত।

প্রকল্পের পূর্বাপর : রাজউক ২০০৮ সালে হাতিরঝিলের নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন করেন। আর রাজধানীতে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে ২০১১ সালে শুরু হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ভাবনা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এই উড়ালপথ নির্মিত হবে। প্রাথমিকভাবে এই পুরো পথকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ এই বছরেই খুলে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১৬ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তা না হওয়ায় কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে এ বছর পুরো কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। চার দফায় সময় বাড়িয়ে এখন প্রথম অংশের কাজ শেষ করা হচ্ছে।

প্রকল্প নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিন ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা এলাকা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত; দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার লেভেলক্রসিং পর্যন্ত এবং তৃতীয় ধাপে মগবাজার লেভেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এই পথের মোট দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার।

এর মধ্যে প্রথম ধাপের দৈর্ঘ্য ৭.৪৫ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপের দৈর্ঘ্য ৫.৮৫ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ধাপের দৈর্ঘ্য ৬.৪৩ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য পথ থাকবে ৩১টি। এই ওঠানামার পথসহ মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। সর্বশেষ অগ্রগতির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপ বিমানবন্দর-বনানী অংশের কাজ হয়েছে ৯২.১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপ বনানী-মগবাজার অংশের অগ্রগতি ৪৫.৩ শতাংশ। শেষ ধাপ মগবাজার-কুতুবখালী অংশের কাজের অগ্রগতি ২ শতাংশ।

কাজের ধীরগতি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নানা কারণে কাজটা শুরু করতেই বেশ সময় লেগেছে। এখন কাজের গতি ভালো। চলতি বছরের বাকি সময়ের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত খুলে দেওয়া হবে।’