ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল একটি বাঁধ বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ইউক্রেন বলছে, এই ঘটনায় প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছেন।
এছাড়া বাঁধ উড়িয়ে দেওয়ার ‘গুরুতর এবং সুদূরপ্রসারী পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে জাতিসংঘও। বুধবার (৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঁধ ধসে পড়ার পর রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয়-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছেন। এছাড়া জাতিসংঘের সাহায্য প্রধান এই ঘটনার ‘গুরুতর এবং সুদূরপ্রসারী পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন।
বিশাল এই বাঁধ ধ্বংসের জন্য মঙ্গলবার ইউক্রেন এবং রাশিয়া একে অপরকে দোষারোপ করেছে। তবে বাঁধটি যারাই ধ্বংস করুক, এটি ইউক্রেনের যুদ্ধ অঞ্চলের একটি বিশাল অংশজুড়ে বন্যা সৃষ্টি করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়া সোভিয়েত যুগের নোভা কাখোভকা বাঁধ উড়িয়ে দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধাপরাধ করেছে। দেশটির দাবি, ইউক্রেনীয় বাহিনী যাতে ডিনিপ্রো নদী পার হয়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা সামরিক আক্রমণ চালাতে না পারে সেজন্যই বাঁধটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বাঁধ ধ্বংসের পেছনে ইউক্রেনকে দোষারোপ করা হয়েছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই বাঁধটি খেরসন অঞ্চলের নোভা কাখোভকা শহরে অবস্থিত এবং এই শহরটি বর্তমানে রুশ সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাতিসংঘের সাহায্য প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, বাঁধ ধ্বংসের এই কাজ ‘ঘর, খাদ্য, নিরাপদ পানি এবং জীবিকা বিনষ্টের মাধ্যমে দক্ষিণ ইউক্রেনের হাজার হাজার মানুষের জন্য মারাত্মক এবং সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘বিপর্যয়ের তীব্রতা শুধুমাত্র আগামী দিনগুলোতেই সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা যাবে।’
রয়টার্স বলছে, বিশাল এই বাঁধ ধ্বংসের পর প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে মার্কিন মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, বন্যার কারণে সম্ভবত ‘অনেক মৃত্যু’ হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বাঁধ বিপর্যয়ের পর প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং বুধবার এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বাঁধটি ধ্বংস হওয়ার কারণে ৮০টি শহর এবং বসতি বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। এছাড়া বেশ কিছু ছবিতে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানির স্রোত লোকালয়ের ভেতরে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে।
বন্যার শিকার হওয়া ৫৩ বছর বয়সী ওকসানা তার বাড়ি সম্পর্কে বলেন, ‘সবকিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে, সব আসবাবপত্র, ফ্রিজ, খাবার, সব ফুল, সব কিছু ভেসে যাচ্ছে। আমি কি করব জানি না।’
এদিকে ডিনিপ্রো নদীর রাশিয়ান নিয়ন্ত্রিত তীরে প্লাবিত নোভা কাখোভকার বাসিন্দারা রয়টার্সকে বলেছেন, কেউ কেউ সেখান থেকে চলে যাওয়ার আদেশ দেওয়া সত্ত্বেও তারা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাশিয়ান সৈন্যদের সাথে কথপোকথনের বর্ণনা দিয়ে হ্লিব নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘তারা বলেছে- কোনও ধরনের সতর্কতা ছাড়াই তারা গুলি করার জন্য প্রস্তুত’।
এছাড়া রাশিয়ান অধ্যুষিত নদীর তীরে অবস্থিত কাজকোভা ডিব্রোভা চিড়িয়াখানা সম্পূর্ণভাবে প্লাবিত হয়েছে এবং ৩০০ প্রাণী মারা গেছে বলে চিড়িয়াখানার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
ইয়েভেনিয়া নামে নোভা কাখোভকার একজন নারী টেলিফোনে বলেছেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় আরও বেশি করে পানি আসছে। এটা খুবই নোংরা।’
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই ঘটনায় কে দায়ী তা এখনও অনিশ্চিত। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রবার্ট উড সাংবাদিকদের বলেন, বাঁধ ধ্বংস করে ইউক্রেন নিজের জনগণের ক্ষতি করবে; এই ধরনের চিন্তা অর্থহীন।
উল্লেখ্য, ৩০ মিটার উচু এবং ৩.২ কিমি (২ মাইল) লম্বা এই বাঁধটি ১৯৫৬ সালে কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশ হিসাবে ডিনিপ্রো নদীর ওপর নির্মিত হয়েছিল। এই বাঁধটি রাশিয়ায় সংযুক্ত ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে এবং জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে পানি সরবরাহ করে থাকে।