২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৬:৫০ অপরাহ্ন


আমেরিকায় না গেলে কিছু যায় আসে না আরও মহাদেশ আছে
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৩
আমেরিকায় না গেলে কিছু যায় আসে না আরও মহাদেশ আছে File Photo


আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা বাংলাদেশের মানুষকে যাতে স্পর্শ করতে না পারে, সেজন্য আমাদের মাটি ব্যবহার করতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে, সেদিকে লক্ষ রেখেই উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে আমরা নিজের পায়ে চলব, নিজের দেশকে গড়ে তুলব। কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে-এ নিয়ে মাথাব্যথা করে কোনো লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু (কিছু) যায় আসে না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে-সেই মহাদেশে আমরা যাতায়াত করব, বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত, উন্নত ও চাঙা হবে।


শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার ট্রাকস্ট্যান্ডের উত্তরপাশে নবনির্মিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ভোট চুরি করে, ভোট ও জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলেছে, ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দেন। কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতির দায়ে এই আমেরিকাই কিন্তু তারেক জিয়াকে তাদের দেশে ভিসা দেয়নি। এখন তারাই (বিএনপি) তাদের (আমেরিকার) কাছে ধরনা দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি-মানুষকে চিনি, বাংলাদেশকে চিনি। নদীনালা, খালবিল চিনি। বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল কোথায়, কল্যাণ কোথায়-সেটা আমরা খুব ভালো করেই জানি। সেটা মাথায় রেখেই কাজ করে দেশকে উন্নয়নশীল দেশ করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবে। ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যানও আমরা করে দিয়েছি। যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভালো করে চলতে পারে, সেই পরিকল্পনা করে দিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নয়নসমৃদ্ধ দেশ ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।


বাজেট নিয়ে কিছু মানুষ প্রতিবার একই কথা বলে : প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব বলেই দিয়েছি। প্রতিবারই কিছু মানুষ আছে, তারা বাজেট নিয়ে একই কথা বলেন। কে কী বলছে, সেদিকে না তাকিয়ে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নে। আর দেশে একটানা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। কে কী বলল, সেটা নয়-ইনশাআল্লাহ এই বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করে যাব। কারণ, দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।


জনগণের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে : আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তারা জানে একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, উন্নত জীবন পেয়েছে, ডিজিটাল দেশ পেয়েছে। দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি অনেক কথা বলে, আমরা তাদের মতো এত শিক্ষিত না হলেও আমরা দেশকে ভালো করে জানি, দেশের মানুষকে জানি। বাংলাদেশের মানুষের কীভাবে উন্নয়ন, কল্যাণ ও উন্নয়ন করা যায়, তা আমরা ভালো করেই জানি। সেটা জেনেই ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, মানুষের কল্যাণ করে যাচ্ছি।


আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা করেছে : প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, যারা অগ্নিসন্ত্রাসের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, গ্রেনেড হামলা করেছে, তাদের মুখে আজ গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। বারবার আমার ওপর আঘাত এসেছে, বোমা হামলা, গুলি ও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে। গ্রেনেড হামলায় ২২ নেতাকর্মী নিহত এবং ওবায়দুল কাদেরসহ শত শত নেতাকর্মী গ্রেনেডের স্পি­ন্টারের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আইয়ুব-ইয়াহিয়া, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া-সবাই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে, তৃণমূল জনগণের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা সংগঠনকে কেউ কোনোদিন ধ্বংস করতে পারেনি, পারবেও না।


জানি এই গরমে অনেকের কষ্ট হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কিন্তু তেলের দাম বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে, কয়লার দাম বেড়ে গেছে। সেটাই এখন অবাক করার বিষয়-কয়লাই পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই আমাদের কিনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। আগে একসময় যারা আন্তর্জাতিকভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করে বেড়িয়েছে, তারাই এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে। তিনি আরও বলেন, আমি জানি, এই গরমে অনেকের কষ্ট হচ্ছে। আমরা তো লোডশেডিং একদম দূর করে দিয়েছিলাম। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা যদি না হতো, আর করোনা যদি দেখা না দিত, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা না দিত, মূল্যস্ফীতি দেখা না দিত; তাহলে কোনো কষ্ট হতো না।


কাতার ও ওমানের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে : এ সময় তিনি সুখবর দিয়ে বলেন, যা হোক তবুও সুখবর যে, কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা হচ্ছে যাতে আমরা গ্যাস আনতে পারি, এই কষ্ট দূর করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, এই বিদ্যুৎ একবার যদি মানুষের অভ্যাস হয়ে যায়, তারপর যদি বিদ্যুৎ না থাকে, কষ্টটা বাড়ে। আর বিএনপি-জামায়াতের সময় তো মানুষ হাহাকার করত। বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসাটে খালেদা জিয়া গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিল। সারের দাবি করেছিল বলে প্রায় ১৮ জন কৃষক হত্যা করেছে। শ্রমিক মজুরির কথা বলেছিল বলে ১৭ জন শ্রমিককে রোজার সময়ে হত্যা করেছিল।


ভবিষ্যতে গার্মেন্ট খাতের পর দ্বিতীয় রপ্তানিকারক খাত হিসাবে প্রযুক্তি খাতকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী সব ধরনের অবকোঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ঢাকার চারপাশে চারটি স্যাটেলাইট টাউন, ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড রিং রোডসহ আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। তেজগাঁও থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে ফেলতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথায় ভালো জায়গা পাওয়া যায়, সেটি দেখা হচ্ছে। সেখানে আধুনিক ট্রাকস্ট্যান্ড যাতে করা যায়। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এ সময় বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী ও সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।


ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের স্থায়ী ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসব-উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। তীব্র দাপদাহ উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগে থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। দলীয় নেতাকর্মীরা গণভবন থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ও মিছিল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানস্থলে এসে প্রথমে ভবনের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন? এরপর প্যান্ডেলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন।


অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।


সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিকসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।