চলমান সংঘাতের কারণে সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি এতিমখানায় আটকে পড়া বিভিন্ন বয়সের ৬০ জন শিশু মারা গেছে। গত ছয় সপ্তাহ ধরে তারা সেখানে আটকে ছিল।
শিশুদের বেশিরভাগই খাবারের অভাব ও জ্বরে ভুগে মারা গেছে। তাদের মধ্যে শুধু দুইদিনেই প্রাণ হারায় ২৬ জন।
খার্তুমের আল-মায়কোমা এতিমখানার এক ডজনেরও বেশি চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মীরা শিশুদের দুর্ভোগের এই তথ্য জানান। কয়েক ডজন নথি, ছবি ও ভিডিও পর্যালোচনা করে এতিমখানার শোচনীয় পরিস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে সংবাদ সংস্থা এপি।
কর্মীদের তোলা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাদা চাদরে বাঁধা শিশুদের মৃতদেহ দাফনের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। অন্য ফুটেজে দেখা যায়, শুধু ন্যাপি পরা দুই ডজন শিশু একটি ঘরের মেঝেতে বসে আছে। তাদের অনেকেই কাঁদছে। নারী কর্মীরা তাদের কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন।
এক কর্মী জানান, গত সপ্তাহে কাছাকাছি গোলাবর্ষণে এতিমখানার বড় একটি অংশ ধুলোয় ঢেকে যায়। পরে বাচ্চাদের সরিয়ে বড় একটি ঘরে রাখা হয়।
স্বেচ্ছাসেবক আফকার ওমর মোস্তফা টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন কিছু আমরা যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে আশঙ্কা করছিলাম।
গত ২৭ মে ১৪ শিশু ও পরদিন আরো ১২ জন শিশু মারা যায়। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়।
এরপর গত ২৯ মে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা, ইউনিসেফ ও রেড ক্রস ওই এতিমখানায় খাদ্য ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করেছে।
এতিমখানার কর্মীরা সতর্ক করে জানান, আরো শিশু মারা যেতে পারে। শিশুদের যেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত খার্তুম থেকে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়।
১৫ এপ্রিল থেকে দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক উপদলের মধ্যে লড়াই চলছে। যা খার্তুম ও অন্যান্য শহরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
সুদানের ডক্টরস সিন্ডিকেটের পরিসংখ্যান অনুসারে, সংঘাতে কমপক্ষে ১৯০ শিশুসহ ৮৬০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে হাজার হাজার। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বেশির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সুদান থেকে সাড়ে ১৬ লাখের বেশি মানুষ নিরাপদ এলাকায় বা প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেছে। বাড়িতে আটকা পড়ার লোকেরা খাদ্য ও পানিসহ নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন।
এদিকে ইউনিসেফের মতে, সুদানে এক কোটি ৩৬ লাখের বেশি শিশুর জরুরি মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। যুদ্ধের আগে এই সংখ্যা ছিল ৯০ লাখের মতো। সূত্র: এএফপি, ইন্ডিয়া টুডে