অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহযোগিতা করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ইএমকে সেন্টারে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
মার্কিন ভিসানীতির সম্ভাব্য প্রভাব বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, সবাইকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সঠিক আচরণ করতে উৎসাহ দিতেই ওই নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন এবং এ লক্ষ্যে কাজ করবেন তাঁদের ভয়ের কিছু নেই।’
গত ২৪ মে রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। ওই নীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে বা যারা বাধা দেবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য বিবেচিত হতে পারে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রকে কেন ভিসানীতি ঘোষণা করতে হলো, জানতে চাইলে পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকারকে সহযোগিতা করতেই নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছেন তিনি।
পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রত্যেক বাংলাদেশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর অঙ্গীকার স্পষ্ট করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবেন বলেছেন। তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে আমি কোনো পার্থক্য দেখিনি।’
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে এখন কী কী চ্যালেঞ্জ আছে, জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, চ্যালেঞ্জগুলোর চেয়ে বরং তিনি ইতিবাচক দিকগুলোকেই গুরুত্ব দিতে চান।
তিনি বলেন, দুই দেশের জোরালো সম্পর্কের অনেক বিষয় আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে ফুটে উঠেছে। তিনি বাণিজ্য, নিরাপত্তা সম্পর্ক, স্বাস্থ্যসেবা খাতে সহযোগিতার উদাহরণ দেন।
বিদ্যমান নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই।
এর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং মার্কিস রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। রাষ্ট্রদূত হাস তাঁর বক্তব্যে প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া বিভিন্ন ছবি ও সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অতীত দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে ঢাকায় মার্কিন কর্মকর্তা আর্চার জে ব্লাডের টেলিগ্রামের কথা। বাংলাদেশিদের ওপর জেনোসাইডকে যুক্তরাষ্ট্র তখন অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে গণ্য করে হস্তক্ষেপ না করার নীতি নিয়েছিল। ব্লাড ও তাঁর ঢাকার সহকর্মীরা ওই নীতির বিরোধিতা করেছিলেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশ আজ সহযোগিতা করছে। তিনি এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতার প্রশংসা করেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ঘাতক রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের মতো বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রে আশ্রয় পেয়েছে। রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অনেক দিন ধরে ঝুলে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় আমরা দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বন্ধুদের সঙ্গে অংশীদারি চেয়েছি। আগামী দিনেও তা অব্যাহত রাখব।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার আশা, আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাকে ক্ষুদ্র দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে উন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তবধর্মী প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।