২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৭:৩১ অপরাহ্ন


আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাঁদে মানুষ পাঠাবে চিন
রিয়াজ উদ্দিন:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৫-২০২৩
আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাঁদে মানুষ পাঠাবে চিন আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাঁদে মানুষ পাঠাবে চিন


বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক। গোটা ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়টা ঘিরে ছিল আরেক যুদ্ধ। মহাকাশ-যুদ্ধ । একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়ে, তারপর কৃত্রিম উপগ্রহে মানুষকে পাঠিয়ে কার্যত তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল তারা। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিল বিজ্ঞান। অন্যদিকে তাদের টেক্কা দিতে মরণপণ পরিশ্রম করেছিল আমেরিকা। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, ছয়ের দশক শেষ হওয়ার আগেই চাঁদের মাটিতে পা পড়বে মানুষের। ফেলবে আমেরিকা।

দিন বদলেছে, যুগ বদলেছে। সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন আর নেই। মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়া যদিও এখনও শীর্ষে। তাদের সয়ুজ রকেটকে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ মানুষবাহী মহাকাশযান। অথচ সেই সোভিয়েত দাপটের বেশিরভাগটাই যেন নেই। সবটা চলে গিয়েছে আটলান্টিকের ওপারে। নাসার পাশাপাশি এবার তরতরিয়ে এগোচ্ছেন ইলন মাস্ক। চাইছেন, মঙ্গলে উপনিবেশ গড়বেন।

কিন্তু তার পাশাপাশি এক নতুন খেলোয়াড় নেমেছেন মাঠে। প্রায় নিঃসাড়ে বলা যায়। কিন্তু প্রবলভাবে। হিমালয়ের ওপারে, হোয়াংহো, ইয়াংসি নদীর ধারেও এবার মহাকাশ সভ্যতার নব সূচনা হয়েছে।

ভূরাজনীতির নানা অঙ্কে গোটা এশিয়া, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে কার্যত নিরঙ্কুশ শাসন করতে চাইছে চিন। রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন। যা মাথাব্যথা বাড়িয়েছে নয়াদিল্লির। পাশাপাশি, চিন্তায় হোয়াইট হাউসও। সেই লক্ষ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে চলতে চাইছে আমেরিকা। এবার মহাকাশেও চলে এল চিনা সাফল্য। ‘আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন’ বা আইএসএসের পাশাপাশি, চিন নিজেদের স্পেস স্টেশন ‘তিয়াংগং’ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

বস্তুত, মহাকাশে নিজেদের স্পেস স্টেশন বা মহাকাশ কেন্দ্র বানানো নিয়ে অনেক দেশেই গবেষণা চলছে। তাতে রয়েছে ভারতও। এমনকি আইএসএস বা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের আয়ুও আর বেশিদিন নেই। ফলে ২০১১ সাল থেকেই চিন ‘তিয়াংগং-১’ নামের একটি ‘প্রোটোটাইপ’ বানিয়ে মহাকাশে ছাড়ে। লং মার্চ সিরিজের রকেটে চড়ে তাতে যান একাধিক চিনা মহাকাশপচারী। ছিলেন দু’জন মহিলাও। লিউ ইয়াং ও ওয়াং ইয়েপিং। দুজনেই চিনা বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানের পাইলট!

চিনে মহাকাশপচারীদের বলে ‘তাইকোনাট’। এবার চিনের পরিকল্পনায় রয়েছে চাঁদ। নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক সূত্রের খবর, এই বিষয়ে জোরকদমে পরিকল্পনা চালাচ্ছে চিন। লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদের মাটিতে চিনা তাইকোনাটদের অবতরণ করানো।

বস্তুত, সাতের দশকের পর আর চাঁদে মানুষের পা পড়েনি। অ্যাপোলো ১১ মিশনে সেই যে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে পা রেখে বলেছিলেন, ‘মানুষের এ’ এক ছোট্ট পদক্ষেপ, মানবজাতির এ’ এক সুবিশাল অগ্রগতি’… তারপর থেকে পর পর অ্যাপোলো অভিযানে চাঁদে পা পড়েছিল একাধিক মার্কিন মহাকাশচারীদের। সোভিয়েত ইউনিয়ন চেষ্টা করেও পারেনি। পরে অবশ্য স্পেস স্টেশন বানানোতে তাদের ‘মীর’ স্টেশন আলোড়ন ফেলেছিল। কিন্তু চাঁদ অধরাই থেকে গিয়েছে তাদের।

এতদিন পর আমেরিকা আবার পরিকল্পনা করছে চাঁদে মানুষ নামানোর। বস্তুত, চাঁদে প্রথমবার কোনও মহিলার পা পড়ুক, চাইছে নাসা। তাদের এই নতুন মিশনের নাম ‘আর্টেমিস’। ইতিমধ্যেই তার পরিকল্পনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। নাসা ছাড়াও জেফ বেজোসের ‘ব্লু অরিজিন’, ইলন মাস্কের ‘স্পেস এক্স’, ‘বোয়িং’, ‘লকহিড মার্টিন’-সহ একাধিক বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন সংস্থা হাত মিলিয়েছে এই প্রকল্পে। এদিকে চিন কার্যত একা। ইতিমধ্যেই তাদের তিয়াংগং স্পেস স্টেশন, আয়তনে যা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের তিন ভাগের এক ভাগ, তা সফলভাবে কক্ষে রয়েছে। এবার ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে চিনের পা রাখাতেই তাদের লক্ষ্য।

দেখেশুনে রাজনীতিতে বলাবলি চলছে, এ যেন সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের পরের মহাকাশ-যুদ্ধ ফিরে এল আবার। শুধু রাশিয়ার জায়গা নিয়েছে চিন।