২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৩:২৩:৩০ পূর্বাহ্ন


গণধর্ষণের বিচার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০২-২০২২
গণধর্ষণের বিচার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া গণধর্ষণের বিচার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া


গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুই জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন: রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন জাহান ইশিতা, নুসরাত জাহান ও লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়িসহ দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া মোড়ে ধর্ষকদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন। 

বিকেল ৩টায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ও পুলিশ সুপার আয়শা সিদ্দিকা ঘোনাপাড়া মোড় গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। 

এ সময় জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, আজ তোমার যে আন্দোলন করছে সেটা যৌক্তিক। একটা ঘটনা ঘটলে দুই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেটা হলো- এটা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। আমরা  তোমাদের কথা দিচ্ছে আগামী তিন দিনের মধ্যে ধর্ষকদের শনাক্ত করা হবে। তোমরা এবার হলে ও বাসায় ফিরে যাও। 

এ সময় শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের দেওয়া আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।  পুলিশ সুপার আয়শা সিদ্দিকা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকদের শনাক্ত করা হবে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন আন্দোলনকারীদের ফিরে যেতে বলায় দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়ি ভাঙচুর করেন স্থানীয়রা। 

অপরদিকে সড়র অবরোধের কারণে ঢাকা ও খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা শত শত বাস, মালবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কের ওপর আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। পরে বিকেল ৫টায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আহত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন জাহান ইশিতা বলেন, আমরা রাস্তায় বসে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম।  এমন সময় ছাত্রলীগ ও স্থানীয়রা আমাদের ওপর হামলা করে।  

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা বলেন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী গিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে চলে আসেন। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংঘর্ষ  হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ভিকটীমের সঙ্গে কথা বলে ওই রাতেই দুই জনকে আসামি করে আমি বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেছি। গোপালগঞ্জ থানা পুলিশ ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ভিকটিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী তার এক বন্ধুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহরের হেলিপ্যাড থেকে নবীনবাগে তার মেসে ফিরছিলেন। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাদের গতিরোধ করে এবং বন্ধুকে মারপিট করে ওই ছাত্রীকে পার্শ্ববর্তী নবনির্মিত জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজ ভবনের মধ্যে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। রাতেই ছাত্রী ধর্ষণের খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জ থানা ঘেরাও করে। পরে সকাল থেকে ঘোনাপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। 

রাজশাহীর সময় /এএইচ