সূর্য থেকে দূরত্বের বিচারে সৌরমণ্ডল বা সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ শুক্রে আগ্নেয়গিরির সংখ্যা আমাদের পৃথিবীর তুলনায় ৫৬ দশমিক ৬৬ গুণ বেশি। পুরো পৃথিবীতে যেখানে মোট আগ্নেয়গিরির সংখ্যা ১ হাজার ৫ শ’র কিছু পেশি, সেখানে শুক্রে আগ্নেয়গিরির সংখ্যা ৮৫ হাজারেরও অধিক।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান। নাসার গবেষকরা জানিয়েছেন, শুক্রে যে আগ্নেয়গিরি রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত শত শত আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত ঘটে চলেছে তা এই প্রথম জানা গেছে।
শুক্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ১৯৯০ সালে গ্রহটির কক্ষপথে ম্যাগেলান নামের একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছিল নাসা। সেই মহাকাশযানটিই রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রহটির আগ্নেয়গিরি সম্পর্কিত নতুন এ তথ্য এনেছে।
যে রাডার প্রযুক্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে, সেটির উদ্ভাবক দলের নেতৃত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল বায়ার্ন। নাসার অন্যতম গবেষকও তিনি।
মার্কিন মহাকাশবিদ্যা সম্পর্কিত পিআর রিভিউ সাময়িকী জেজিআর প্ল্যানেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারের তথ্য জানিয়ে পল বায়ার্ন বলেন, ‘শুক্রের গঠনপ্রকৃতি জানতে কীভাবে এবং কোথায় অনুসন্ধান চালাতে হবে— বিজ্ঞানীদের সে সম্পর্কিত নির্দেশনা দেবে আমাদের নতুন ডাটাবেসটি।’
নিবন্ধে তিনি আরো জানান, শুক্রের এই আগ্নেয়গিরিগুলোর প্রতিটির পারস্পরিক দূরত্ব ২০ কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার। নাসার গবেষকরা গার্ডিানকে বলেছেন , আগ্নেয়গিরি সম্পর্কিত নতুন এই তথ্য নাসার ভৌগলিক গঠন বুঝতে সহায়ক হবে।
আকার-আয়তনে পৃথিবীর প্রায় সমান বলে শুক্রের আরেক নাম ‘পৃথিবীর জমজ বোন’। তবে এই আকার-আকৃতি ছাড়া আমাদের গ্রহের সঙ্গে আর কোনো সাদৃশ্য নেই গোলাকার এই গ্রহটির।
শুক্রের নিজস্ব বায়ুমণ্ডল রয়েছে, তবে সেই বায়ুমণ্ডলের সিংহভাগই কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিপূর্ণ। ফলে প্রতিদিন গ্রহটিতে সূর্যের যে তাপ আসে, তার বেরিয়ে যেতে পারে না। মেঘ শুক্রের পাথুরেপৃষ্ঠ থেকে বেশ ওপরে সালফিউরিক এসিডের ঘন মেঘের আবরণ গ্রহটিকে ঘিরে আছে। সেই মেঘের স্তরও গ্রহের পরিবেশ ও পৃষ্ঠ থেকে তাপ বেরিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা।
নাসার তথ্য অনুযায়ী, শুক্রের পৃষ্ঠ অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রায় ৪৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় সীসাও গলে যায়। শুক্রে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়, তবে তা অ্যাসিড বৃষ্টি এবং গ্রহের অতিরিক্ত তাপের কারণে পৃষ্ঠে পড়ার আগেই শুকিয়ে বাস্পীভূত হয়ে যায় সেই বৃষ্টি।