২৯ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০১:৫৬:৪৯ পূর্বাহ্ন


কুনোয় চিতামৃত্যু নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা
সুমাইয়া তাবাস্সুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৫-২০২৩
কুনোয় চিতামৃত্যু নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা কুনোয় চিতামৃত্যু নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা


কুনোয় ফের চিতামৃত্যু নিয়ে এবার রীতিমতো বিরক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃহস্পতিবারই কুনোয় ফের দু-দু’টি চিতাশাবকের মৃত্যুর পরে সে দেশের বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট ভ্যান ডের মেরওয়ে জানিয়েচেন, এভাবে ছোট জায়গায় চিতার বাসস্থান তৈরির চেষ্টা করা হলে, তা গোটা প্রজাতির জন্য একটা বড় ভয়ের বিষয়।

বুধবারই কুনো জাতীয় উদ্যানের তরফে জানানো হয়েছিল, একটি চিতা শাবকের মৃত্যু  হয়েছে। জন্মেই মারা গেছে শাবকটি। অসুস্থ ছিল আরও তিন চিতা শাবক। সেগুলির মধ্যে আরও দু’টি চিতার মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার।

কুনো সূত্রে জানা গেছে, প্রবল গরম এবং ডিহাইড্রেশনের কারণেই মৃত্যু হয়েছে চিতা শাবকগুলির। গত মার্চ মাসে ‘জ্বালা’ নামে একটি স্ত্রী চিতা ৪টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল। বুধবার সেগুলির মধ্যে একটির মৃত্যু হয়েছিল। অসুস্থ ছিল বাকি ৩টিও। বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে আরও দুটি শাবকের মৃত্যু হল।

কুনোর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত ২৩ মে ওই এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিনই ছিল মরশুমের উষ্ণতম দিন। সেদিনই বনকর্মীরা খেয়াল করেন চিতা শাবকগুলি অত্যন্ত রুগ্ন, দুর্বল এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কয়েকটির ওজনও স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল। পশু চিকিৎসকরা সেদিনই এ বিষয়ে বনকর্মীদের সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও পরপর দু’দিনে দু’টি চিতার মৃত্যু হল।

এর পরেই পিটিআই-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ভ্যান ডের মেরওয়ে মন্তব্য করলেন, ‘আরও দু’টি চিতা মারা গেল! খুবই দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু অপ্রত্যাশিত নয়।’ তিনি আরও জানালেন, চিতার পুনর্বাসনের যে প্রকল্প ভারত সরকার নিয়েছে, তা আগামী কয়েক মাসে আরও মৃত্যুকে ডেকে আনবে। এখন চিতারা তাদের নিজেদের জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। চিতাবাঘ এবং বাঘেদের মুখোমুখি হতেও শুরু করেছে। এর ফলে আরও অনেক বিপদ হবে কুনো উদ্যানে।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দু’দফায় ২০টি চিতা ভারতে নিয়ে এসে সংরক্ষণ করার যে প্রকল্প, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ভ্যান ডের মেরওয়ে। তিনি যদিও দাবি করেছেন, যে ক’টি চিতা মারা গেছে এবং যেভাবে পরপর তিনটি শাবক মারা গেল তা যে সহনশীলতার বাইরে চলে গেছে তা নয়। তবে যে স্ত্রী চিতাটি পুরুষ চিতাদের মারামারির মুখে পড়ে মারা গেছে, সেই ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক।

তাঁর কথায়, ‘একথা ঠিকই, ইতিহাসে এর আগে এতগুলি চিতার এমন সফল পুনর্বাসন হয়নি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অন্য দেশে চিতা নিয়ে গিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল অন্তত ১৫ বার। তবে কখনওই তা সফল হয়নি। এবারে ভারত তা পেরেছে। চিতার মৃত্যুহার এমনিতেই খুব বেশি। তবে ভারত যেভাবে করছে কাজটি, তা আমরা পূর্ণ সমর্থন করছি না। সমস্ত চিতাকে ছোট জায়গায় ফেন্সিং করে রাখার কারণেই সমস্যা হচ্ছে। ওখানে যে জায়গা রয়েছে, তাতে ২টি বা ৩টি চিতা রাখলে ঠিক হবে। ২০টি চিতার জন্য বিষয়টি সমস্যার।’

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রীতিমতো ঢাকঢোল বাজিয়ে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে চিতাদের নিয়ে গিয়েছিল ভারত। উদ্দেশ্য ছিল চিতাহীন দেশে নতুন করে এই প্রজাতির সংরক্ষণ করা। প্রায় ৭৪ বছর পরে চিতা দেশে ফিরে আসায় আনন্দও কিছু কম ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের হাতে চিতা ছেড়েছিলেন কুনোর জাতীয় উদ্যানে। কিন্তু ছন্দপতন হয় কিছুদিনেই। চিতারা অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করায় উদ্বেগ বাড়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদরা বলছেন, আফ্রিকান চিতা এইভাবে থাকে না। তাদের বিচরণের জন্য অনেক বড় খোলা জায়গা লাগে। কুনোর জাতীয় উদ্যানে সেই ব্যবস্থা নেই। তাদের খোলামেলা জায়গায় ছাড়তে হবে, হাতের কাছে যাতে শিকার থাকে তা দেখতে হবে। আফ্রিকায় যখন চিতারা ছিল তখন তাদের জন্য বিশাল বড় জায়গা রাখা হয়েছিল। প্রতিদিন দু’বার করে গিয়ে দেখে আসা হত চিতাদের। তারা কী খাচ্ছে, কখন খাচ্ছে, শরীর ঠিক আছে কিনা এইসব খতিয়ে দেখা হত দিনে কম করেও দু’বার।

দূর থেকে বনকর্মীরা নজরে রাখতেন চিতাদের, পশুবিদরাও থাকতেন তাঁদের সঙ্গে। কোনও চিতার আচরণে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিকতা দেখলে তাকে এনে চিকিৎসা করা হত। যেহেতু তারা বন্যপ্রাণী তাই সেই মতোই তাদের থাকার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। ভারতে যেখানে চিতাদের রাখা হয়েছে সেখানে এমন পরিবেশ নেই। কীভাবে একটা সংরক্ষিত অরণ্য থেকে চিতা পালিয়ে লোকালয় ঢুকে পড়তে পারে সেটাই আশ্চর্যের। তাছাড়া চিতাদের দেখাশোনাও ঠিক মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদদের।

এই পরিস্থিতিতে একের পর এক চিতার এই মৃত্যুমিছিল উদ্বেগ বাড়িয়েছে সমস্ত মহলে। এমনকী সুপ্রিম কোর্টও চিন্তিত চিতাদের নিয়ে। শুধু তাই নয়, এপ্রিল মাসেই মধ্যপ্রদেশের বন দফতরের তরফে জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে জানানো হয়, কুনোর চিতাদের জন্য বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দু’মাসেরও কম সময়ে তিনটি চিতা ততদিনে মারা গেছিল। এবার তো সেই সংখ্যা আরও বাড়ল। তার পরেও বাসস্থানের এই সংকুলান নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের।

এই পরিস্থিতিতে ভ্যান ডের মেরওয়ে-ও জানিয়েছেন, মুকুন্দ্রা পাহাড়ে যে অরণ্য আছে, সেখানে ৩-৪টি চিতাকে সরানো যেতে পারে। ‘তাঁর কথায়, মুকুন্দ্রা হিলও ঘেরা জায়গা। ওখানে জায়গা বেশি। চিতারা ভাল থাকবে। তবে কিছু হরিণ, চিঙ্কারা ছাড়তে হবে সেখানে। নইলে খাবার কম পড়বে। তবে জায়গা কম হলে, খাবার বেশি থাকলেও চিতারা মারামারি করবে। নানাভাবে আঘাত পাবে। এমনকী একে অপরকে মেরেও দিতে পারে জায়গার জন্য ও স্ত্রী চিতার অধিকার পাওয়ার জন্য। চিতাবাঘের আর বাঘের ভয় তো আছেই। আরও অনেক মৃত্যু দেখতে হবে।’