শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য পৃথক একটি ভিসা নীতি ঘোষণা করল মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে (Bangladesh) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ করার লক্ষ্যে এই নয়া ভিসা নীতি (US B1B2 VISA)। নির্বাচনকে যাঁরা বানচাল করার চেষ্টা করবে তাঁরা আমেরিকায় প্রবেশের অধিকার পাবেন না। তাঁদের মার্কিন ভিসা দেওয়া হবে না।
মার্কিন প্রশাসনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেই-ই হোন না কেন কঠোরভাবে এই নীতি অনুসরণ করা হবে। অভিযুক্ত সরকারি আমলা, শাসক ও বিরোধী শিবিরের রাজনীতিক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত লোকজন কেউই এই বিধিনিষেধের বাইরে নয়। এমনকী অভিযুক্তের পরিবারের লোকেদেরও ভিসা দেওয়া হবে না, জানানো হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের তরফে। প্রসঙ্গত, আগামী বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।
নয়া মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রক বৃহস্পতিবার লম্বা বিবৃতি দিয়েছে। তাতে ভিসা নীতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান জানিয়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধ পরিকর। একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২০০৮-এ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর এযাবৎ অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনই অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বিবৃতির এই অংশ মার্কিন ভিসা নীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। সরকারি বিবৃতিতে নানাভাবেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে মার্কিন উদ্বেগকে অনাবশ্যক বলে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।
আসলে কোনও স্বাধীন-সার্বভৌম দেশই পররাষ্ট্রের এই ধরনের পদক্ষেপ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অনেকেই মনে করছে, মার্কিন প্রশাসন সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাতেই নিজের দেশের আইন প্রয়োগ করে সে দেশের জন্য পৃথক ভিসা নীতি গ্রহণ করল। এই পদক্ষেপের অনুচ্চারিত বক্তব্য হল, হাসিনার সময়ে হওয়া নির্বাচনগুলি অবাধ ছিল না, মনে করে মার্কিন প্রশাসন।
অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে ভোটের আগে বাংলাদেশে বিরোধীরা মার্কিন ঘোষণাকে অস্ত্র করার বাড়তি সুযোগ পেয়ে গেল। বিরোধী দলগুলি বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হোক। সূ্ত্রের খবর, মার্কিন প্রশাসনের এই দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সংবাদমাধ্যমকে ভিসা নীতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমরা কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেইনি। ভিসা নীতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে কারও বিরুদ্ধে ভিসায় বিধিনিষেধ দিতে পারবে, যাঁদেরকে মনে হবে যে তাঁরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছেন।’ তাঁর কথায়, ‘আমরা মনে করি, দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দেশটিতে গণতন্ত্র শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামী লিগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এর ফলে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লিগ সরকার টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কারণে এটি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের নাগরিকেরা তাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের রায় কেড়ে নিয়ে কোনও সরকার ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। জনগণের ভোটাধিকারের অধিকারকে আওয়ামী লিগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে এবং যে অধিকারের জন্য নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার তাদের রয়েছে। সরকার সব শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সভা-সমাবেশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রক দাবি করেছে, ‘বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এক কোটির বেশি ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সেই ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। দেশে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আছে। তথ্য সূত্র: thewall.in।