২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৫৭:৪৭ অপরাহ্ন


স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ৩১৫ চরমপন্থির আত্মসমর্পণ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৩
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ৩১৫ চরমপন্থির আত্মসমর্পণ ফাইল ফটো


স্বাভাবিক জিবনে ফিরতে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইলের চরমপন্থি সংগঠনের সক্রিয় তিন শতাধিক সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। রবিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানায় র‌্যাব-১২ সদর দপ্তরে ৩১৫ জন চরমপন্থি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ২১৬টি অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে ফিরে আসা চরমপন্থিদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ও পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থি সংগঠনগুলো হলো পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এম এল (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (এমবিআরএম) ও পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (জনযুদ্ধ)।
র‌্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আত্মসমর্পণের পর তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য এবং কর্মসংস্থানের ব্যাপারে শেখ হাসিনার সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। আইনি সহায়তাও দেওয়া হবে। হত্যা ও ধর্ষণ ছাড়া অন্যান্য মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেবে সরকার। অন্যদিকে যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে। ভবিষ্যতে তাদের যে কোনো অপরাধ কঠোর হাতে দমনের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। 


তিনি আরও বলেন, আত্মসমর্পণকৃত চরমপন্থি সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করার জন্য বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানসহ  জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে  সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। আত্মসমর্পণের পর মামলা মোকদ্দমা-বিশ্লেষণ করে সেই অনুযায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যাদের নামে মামলা রয়েছে, সেগুলোর বিচার দ্রুত শুরু করা হবে।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আলী হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, র‌্যাব-১২ অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মারুফ হোসেন, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, আত্মসমর্পণকারী দলের কয়েক সদস্য ফারুক সেখ, সাইদুল ইসলাম ও তাদের স্বজন নাজমা আকতার। তাদের আবেগ মিশ্রিত বক্তব্যে উঠে আসে অন্ধকার জীবনের করুণ কাহিনী।


এর আগে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল পাবনায় ৫শ’ ৯৬ চরমপন্থি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ২০০৭ সালে জেলার তাড়াশের দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগাড়ি মাঠে ১০৬ জন চরমপন্থি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। ১৯৯৮ সালেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের কোনাবাড়ি কলেজ মাঠে শতাধিক চরমপন্থি অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল।
মার্কস-লেলিন ও মাওবাদী আদর্শের নামে ১৪টি চরমপন্থি সংগঠন সক্রিয় ছিল এই জনপদে। এর মধ্যে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এম এল (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি ও পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (জনযুদ্ধ) অন্যতম। ১৯৬৮ সাল থেকে এসব সংগঠন বিস্তৃত হতে থাকে। শ্রমিক সমাজের অধিকার আদায়ের প্রলোভনে তরুণ সমাজকে ভুল বুঝিয়ে দলে টানতে থাকে চরমপন্থিদের শীর্ষ নেতারা। আশি-নব্বইয়ের দশকে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে চরমপন্থি সংগঠনগুলো। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আলাদা রাজত্ব কায়েম করতে থাকে তারা। হত্যা করা হয় কয়েক হাজার মানুষকে। পরবর্তীতে আধিপত্য বিস্তার ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হতে থাকে তারা। একে অপরকে হত্যা করতে থাকে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।
এ অবস্থায় ২০২০ সালে উদ্যোগ গ্রহণ করে র‌্যাব। এ উদ্যোগে এ অঞ্চলের বিভিন্ন চরমপন্থি সংগঠনের ৭শ’ নামের তালিকা থেকে বাছাই করে ৩১৫ নেতাকর্মীকে আত্মসমর্পণ করার তালিকা তৈরি করা হয়। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সম্মত হয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ ৩১৫ জন আত্মসমর্পণ করেন।
টাঙ্গাইলে অর্ধশতাধিক চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করবে আজ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (সর্বহারা) অর্ধশতাধিক চরমপন্থি অপরাধের অন্ধকার পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন। সোমবার র‌্যাবের মাধ্যমে তারা আত্মসমর্পণ করবেন। তাদের মধ্যে অনেকেই অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে। এতদিন গ্রেপ্তার ও মৃত্যুর আতঙ্ক থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের আত্মগোপনে রেখেছিলেন এসব চরমপন্থি সদস্য। র‌্যাব-১২’র অধিনায়ক মারুফ হোসেন পিপিএম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 
এ বিষয়ে র‌্যাব-১২ (সিরাজগঞ্জ ক্যাম্প)’র অধিনায়ক মারুফ হোসেন পিপিএম জানান, সোমবার তারা আত্মসমর্পণ করার কথা রয়েছে। আত্মসমর্পণের পর তাদের দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। তাদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।