২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:০২:৫৮ অপরাহ্ন


দেশের ২৮টি বিমানবন্দর সচলে উদ্যোগী বেবিচক
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৫-২০২৩
দেশের ২৮টি বিমানবন্দর সচলে উদ্যোগী বেবিচক ফাইল ফটো


দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্রিটিশ সরকারের আমলে তৈরি ২৮টি বিমানবন্দর রয়েছে। এসব বন্দরে রয়েছে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েও। কিন্তু এগুলো বর্তমানে বিমান চালনার অনুপযুক্ত। কয়েকটি রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার দখলে। এসব বন্দরসহ আরও হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারে মাঠে নামছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এজন্য গঠন করা হয়েছে একাধিক টিম। এসব টিম এরই মধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে। বেবিচকের গত এপ্রিলের মাসিক সমন্বয় সভায় এ সংক্রান্ত বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

জানা গেছে, এসব বিমানবন্দরের রানওয়েগুলোর দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ছয় হাজার থেকে ৮ হাজার ফুট পর্যন্ত করার টার্গেট নিয়েছে বেবিচক। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত ও দখলে থাকা ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমসেরনগর, কুমিল্লা ও তেজগাঁও বিমানবন্দর। বর্তমানে এসব বন্দরের কোনোটিতেই বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে না। দেশের অভ্যন্তরে পর্যটন খাতের বিকাশ এবং আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেবিচকের সভাসূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও বলেছেন, সারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।

বেবিচকের সভাসূত্র জানায়, এখন থেকে প্রতি মাসের সমন্বয় সভায় বেবিচক ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বাপক) কর্তৃক দুই-তিনটি জেলার জমির তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি বেদখলকৃত জমির ডেটাবেজ প্রস্তুত এবং তা উদ্ধারে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। বিমানবন্দরগুলোর জমি বিভিন্ন সংস্থার দখলে রয়েছে, যা নিজ নামে আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বেবিচক। সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোলায় বেদখল হওয়া ৩৫ দশমিক ৯১ একর জমি উদ্ধার ও ভূমি উন্নয়ন কর নেওয়ার জন্য ভোলা জেলা প্রশাসককে গত জানুয়ারি মাসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপর বিষয়টি সুরাহা করতে জেলা প্রশাসক একটি কমিটি গঠন করেছে।

এদিকে বিভিন্ন সংস্থার দখলে থাকা বিমানবন্দরগুলোর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের বরাবর পত্র প্রেরণ করেছে বেবিচক। রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বেবিচকের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমি এপিবিএনসহ বিভিন্ন সংস্থার দখলে রয়েছে। এখানে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ওয়্যারহাউস নির্মাণ করা হবে। জরুরি ভিত্তিতে এ জমি হস্তান্তর করতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে বেবিচক। এছাড়া বিমানের দাবিকৃত আশকোনা হজ ক্যাম্পের সামনে শত কোটি টাকা মূল্যের জায়গার লিজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সে জমি দখল নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বেবিচক। প্রতি মাসের সমন্বয় সভায় এসব বিষয়ের হালনাগাদ তুলে ধরতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করতে বলা হয়েছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানান, রেল ও সড়কপথে যানবাহন ও যাত্রীচাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় কাক্সিক্ষত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানো দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। এ জন্য যাত্রীরা এখন আকাশপথের দিকে ঝুঁকছেন। তাই বন্ধ থাকা অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বিমানবন্দরগুলো সচলে বেবিচকের এ উদ্যোগ সময়োপযোগী ও যথার্থ। এটা করা গেলে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসবে। ফলে আকাশপথে পরিবহন বাড়বে; বাড়বে যাত্রীও।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বন্ধ থাকা বিমানবন্দরগুলো সচলে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কিছু বিমানবন্দর বিভিন্ন সংস্থার দখলে রয়েছে। সেগুলো আমাদের আওতায় নেবো। বিমানবন্দরের জায়গা নির্ধারণ করছি, কিছু জায়গা দখল হয়ে গিয়েছিল, তার কিছু উদ্ধার করেছি, সেগুলো সীমানাপ্রাচীর দিয়ে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এসেছি। বাকিগুলো উদ্ধারে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি যোগ করেন, বেবিচকের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারেও কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তাদের কাজ করছে।

বেবিচকের পক্ষ থেকে চলতি মাসে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্রিটিশ আমলে তেজগাঁও বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৩৩৩ দশমিক ২০৮০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে আরও ১৬১ দশমিক ৭৯১২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। তেজগাঁও বিমানবন্দর ১৯৮১ সালে কুর্মিটোলায় স্থানান্তর হওয়ায় বেবিচকের অধিগ্রহণকৃত ১৬১ দশমিক ৭৯১২ একর ভূমি ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করা হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিগ্রহণকৃত ১৩৩ একর ভূমি বেবিচককে হস্তান্তর করে এবং হস্তান্তরিত ভূমি স্বপ্ন প্রতিষ্ঠানের নামে মহানগর জরিপে রেকর্ডভুক্ত হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণকৃত ২৯৭ দশমিক ২৮ একর ভূমি বেবিচককে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়। ব্রিটিশ আমলে কুমিল্লা বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৪২২ দশমিক ৭৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার পর এটি বিমানবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু বর্ণিত বিমানবন্দরের সমুদয় ভূমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তার মধ্যে ওই বিমানবন্দরে বর্তমানে বেবিচক ৭৭ একর ভূমিতে নাভ-এইড যন্ত্রাবলি স্থাপন করে বিমানের ওভার ফ্লাইং নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ব্রিটিশ আমলে শিবগঞ্জ এয়ারফিল্ড নির্মাণের জন্য ২১৩ দশমিক ৭০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়, যা যুদ্ধোত্তর সময়ে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে আরও ১৭ দশমিক ৩৪ একর (মোট ২৩১ দশমিক ০৪ একর) ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসএ জরিপে বেবিচকের নামে ১০০ দশমিক ৭০ একর ভূমি রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট ১৩০.৩৪ একর ভূমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ডভুক্ত এবং তাদের দখলে রয়েছে। বেবিচকের দখলে ৯৮ দশমিক ১৭ একর ভূমির মধ্যে ৭০ একর কৃষি জমি ইলেক্ট্রা হোল্ডিংস লি.-এর অনুকূলে ইজারা প্রদান করা হয়, যা ১ম বছরের ইজারার মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। অবশিষ্ট ২৮ দশমিক ১৭ একর ভূমিতে রানওয়ে, এপ্রোন, ট্যাক্সিওয়ে, টার্মিনাল ভবন ও ডামপ্যাড রয়েছে।

ব্রিটিশ আমলে শমসের নগর বিমান ঘাঁটি নির্মাণের জন্য ৬২২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়, যা যুদ্ধোত্তর শমসের নগর বিমানবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সমুদয় ভূমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। বগুড়া স্টলপোর্ট নির্মাণের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বগুড়া জেলার সদর উপজেলার এরুলিয়া ও কাহালু মৌজায় এল কেন নং ১/৯৫-এর মাধ্যমে বেবিচক কর্তৃক ১০৯ দশমিক ৮১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। বর্ণিত ভূমির গেজেট প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর বেবিচকের নামে রেকর্ডভুক্ত। ওই ভূমি বাংলদেশ বিমানবাহিনীর আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য অধিগ্রহণকৃত ভূমি ২০ বছরের রাইট অব ইউজ প্রদান করা হয়। যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি। নবায়নের জন্য আবেদন করেছে যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খানজাহান স্টলপোর্ট নির্মাণের লক্ষ্যে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সালে এলএ কেস নং ১৪/১৯৯৪-৯৫ এর মাধ্যমে ৯৪ দশমিক ৯০ একর এবং এলএ কেস নং ১৩/১৯৯৯-২০০০ এর মাধ্যমে ২ দশমিক ৬৫ একর (৯৪.৯০+২.৬৫)=৯৭ দশমিক ৫৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং অধিগ্রহণকৃত অধিকাংশ ভূমিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য বিভিন্ন মৌজায় এলএ কেস নং ৫/২০১৬-১৭ এর মাধ্যমে ৫২৯ দশমিক শূন্য ৮৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়, যা ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট দখল হস্তান্তর/গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর গেজেট প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ৬ আগস্ট। সর্বমোট ৬২৬ দশমিক ৬৩৫০ একর ভূমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অধিগ্রহণকৃত ৫২৯ দশমিক শূন্য ৮৫০ একর ভূমির গাছপালা ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ বেবিচক কর্তৃক পরিশোধ করায় গাছপালা ও স্থাপনার মালিক বেবিচক। তাই গাছপালা ও স্থাপনা স্পট নিলামে বিক্রি করার লক্ষ্যে বেবিচক, জেলা প্রশাসক, গণপূর্ত ও সামাজিক বনবিভাগ বাগেরহাটের প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।