চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ জনের মরদেহ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। নিহতদের বহনকারী গাড়িতে মদের বোতল পাওয়া যাওয়ায় ময়নাতদন্ত করতে চায় পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্বজন ও তাদের সতীর্থরা।
এই নিয়ে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার উঘারিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে শর্ট গানের বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে হয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেটকারে মদের বোতল পাওয়া যায়। এতে পুলিশের ধারণা হয়, আরোহীরা হয়তো মদ্যপ ছিল। যে কারণে বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
কুমিল্লায় তাদের এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল ওই ৫ জন। বাড়ি ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় গাড়িতে মাদক পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া গতি আর বাঁকের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, এই সংঘর্ষের ঘটনার পর উত্তেজিত স্বজনরা চিতোষী-হাসনাবাদ সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। তারা এলাকার একটি বেইলি ব্রিজের পাটাতন খুলে ফেলে। যদিও পরে তা মেরামত করা হয়।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, নিহতদের গাড়িতে এক বোতল হুইসকি পাওয়া গেছে। আবার তাদের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্নও ছিল না। এজন্য আমাদের সন্দেহ হয়েছে। একই গাড়িতে ৫ জন লোক ছিল। অথচ কেউই দরজা খুলে বের হতে পারলো না। বিষয়টি খুবই সন্দেহজনক। এ কারণে আমরা লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ভিসেরা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে চিতোষী-চাটখিল সড়কে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পুকুরে পড়ে গেলে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার শাহপরান তুষার (২২), শাকিল হোসেন (২৬) ও রেজাউল (২৪) এবং যশোর জেলার শার্শা থানার নয়ন (২৫) ও গাজীপুর সদরের উত্তর খাইলপুর গ্রামের সাগর হোসেন (২৪) নিহত হন।
এদের মধ্যে তুষার কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের এবং অন্য দুইজন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা।
স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনায় মনোহরগঞ্জের ৩ জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করতে প্রশাসনের কাছে যান স্বজনরা। তবে এতে তারা ব্যর্থ হন। পরে বিকেলে উঘারিয়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে নিহতদের মরদেহ শাহরাস্তি থানায় নেওয়ার পথে নিহতদের স্বজনরা বাধা দেন। এক পর্যায়ে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে মরদেহ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ শর্ট গানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি শান্ত হলে পুলিশ ৩ জনের লাশ নিয়ে থানায় চলে আসে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা বেশ কিছু দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাত ১২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি। সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজশাহীর সময় / এম আর