ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বামী রাসেল মিয়াকে (৩৮) ধারাল ছুরি দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি দেবাশীষ নয়নসহ কয়েকজন।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
দায়িত্বরত নার্সের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে ওই নার্স সন্ত্রাসীদের ডেকে এনে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার শিকার রাসেল মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শহরের টেপাখোলা বৃন্দাবনের মোড় এলাকার বাসিন্দা রাসেল মিয়া তার স্ত্রী হীরাকে নিয়ে গত ৩ দিন ধরে ভর্তি আছেন ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে। স্ত্রীকে চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেন। আজ (বুধবার) রাতে জেনারেল হাসপাতালের প্যাথালজি ল্যাব বন্ধ থাকায় বাইরে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানোর জন্য জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত সেবিকাকে সিরিঞ্জে রক্ত টেনে দিতে বলেন রাসেল মিয়া। দায়িত্বরত সেবিকা ইলা সিকদার রক্ত টেনে দেওয়া তার দায়িত্ব না জানিয়ে রাসেলের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
এই সময়ে রাসেল নার্সকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন, সরকারি বেতন খান, রক্ত টানবেন না কেন? পরে ইলা শিকদার নার্স সুপারভাইজারের কাছে রাসেলের নামে অভিযোগ দেন। একই সাথে শহরের খাবাসপুর এলাকার যুবলীগ কর্মী দেবাশীষ নয়নকে (জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি) ফোন করে ডেকে আনেন নার্স ইলা শিকদার। পরে রাসেল নার্স সুপারভাইজারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বের হওয়ার পরপরই ওই মহিলা ওয়ার্ডে দেবাশীষ নয়ন ও তার সাথে থাকা আরও ২-৩ জন রাসেলকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে চলে যায়।
খবর পেয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে ফরিদপুর কোতোয়ালী থানা পুলিশের দুই গাড়ি পুলিশ দেখা গেছে।
রাসেলের স্ত্রী হীরা বলেন, আমার শরীরের এক সাইড প্যারালাইজড। প্রতিদিন দুই বার রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। আগামীকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে দেরি হয়ে যাবে। এ কারণে নার্স ইলা শিকদারকে অনুরোধ করা হয়েছিল রক্ত টেনে দিতে। কিন্তু উনি রক্ত টেনে না দিয়ে আমার স্বামীর সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের সেবিকা ইলা শিকদারই দেবাশীষ নয়নকে ডেকে এনেছে। পরে দেবাশীষসহ আরও কয়েকজন আমার স্বামীকে কুপিয়েছে।
জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুজ্জামান বলেন, আহত রোগী রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং হয়েছে। এখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, হাসপাতালের ভেতরে এসে রোগীর স্বজনকে কোপানোর ঘটনায় সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, আমাদের এক সেবিকার সাথে কথা কাটাকাটির জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। আমি ঘটনাস্থলে আছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
রাজশাহীর সময় /এএইচ