২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৭:৩৩:০০ অপরাহ্ন


রেকর্ড আমদানি, তবু অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার
অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৩
রেকর্ড আমদানি, তবু অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার ফাইল ফটো


রেকর্ড পরিমাণ আমদানির পরও শুধুমাত্র মিল মালিকদের কারসাজিতে অস্থির হয়ে ওঠেছে দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। এ অবস্থায় চাপের মুখে সরকার তেলের দাম লিটার প্রতি ১২ টাকা বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এ দাম আরও বাড়াতে দুদিন ধরে কয়েকটি মিল তেলের সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার রুবি সিমেন্ট মোড় হয়ে গুপ্তখাল এবং কর্ণফুলী ডকইয়ার্ড পর্যন্ত পুরো এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, লাইন ধরে শত শত তেলের ট্রাক অপেক্ষা করছে। প্রতিটি ট্রাক আবার প্লাস্টিকের ড্রাম বোঝাই। মূলত তেলের মিল এবং শোধনাগার থেকে ভোজ্যতেল সরবরাহ নিতেই এসব ট্রাক অপেক্ষমাণ। গত দুদিন ধরে রহস্যজনক কারণে মিলগুলো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় ট্রাকের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।

যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা ডলার সংকট - এসবের কোনো প্রভাব দেশের বাজারের ভোজ্যতেল আমদানির ক্ষেত্রে পড়েনি। প্রতিদিনই আসছে তেলবাহী ওয়েল ট্যাংকার। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে নানা সংকট সত্ত্বেও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি করেছে। 

এর মধ্যে ৬৯ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন তেলের পাশাপাশি এক লাখ ৭৮ হাজার ৩৬৭ মেট্রিক টন পাম তেল রয়েছে, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছরের একই সময়ে ৬৬ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন তেলের পাশাপাশি এক লাখ ৪ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন পাম তেল আমদানি করা হয়।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন এবং ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন পাম তেল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৩৮ মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন ও ৮ লাখ ৭ হাজার ৬৭১ মেট্রিক টন পাম তেল আমদানি করা হয়। তবে আমদানি বাড়লেও বিশ্ববাজারে বুকিং রেট কমে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে অন্তত ৩০ শতাংশ কম রাজস্ব পেয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম দামে শুল্কায়ন করা হচ্ছে।’

বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন ১ হাজার ৮০ মার্কিন ডলারে এবং পাম তেল ৯৬০ থেকে ৯৭০ মার্কিন ডলার বিক্রি হচ্ছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

অথচ দেশের বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ সয়াবিন ৬ হাজার ৫৪০ টাকা এবং পাম তেল ৪ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাজেই সরকার প্রতি লিটারে ১২ টাকা বাড়ালেও, মিলগুলোর কারসাজির কারণে বাজারে এর প্রভাব ২৫ টাকা পড়ছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স আর এন ট্রেডার্সের মালিক আলমগীর পারভেজ।

সেই সঙ্গে কয়েকটি মিল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় খুচরা পর্যায়ে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র তিনটি মিল তেলের সরবরাহ সচল রেখেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মালিক মেসার্স সবুজ কমার্শিয়াল শাহেদ উল আলম বলেন, কিছু কিছু মিল আমাদের তেল সরবরাহ করছে না। তাদের চাহিদা হচ্ছে বর্ধিত ভ্যাটের টাকা তাদের দিতে হবে।

তবে সংকট না থাকা সত্ত্বেও সরকারের নতুন করে তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়াকে মিলগুলোর কারসাজি হিসেবেই দেখছে ক্যাব। তাদের অভিযোগ, মিল মালিকদের চাপের মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতি স্বীকার করায় ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়েছে। এ বিষয়ে ক্যাবের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সভাপতি এস এন নাজের হোসেন বলেন, এখন যে দাম নির্ধারণ করা হলো, সেটির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। সেই সঙ্গে তেল কিনতে ভোক্তাদের অনেক বেশি খরচ করতে হবে।  

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই আমদানি করে দেশের প্রতিষ্ঠিত ৬ থেকে ৮টি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের ১০ মাসে ভোজ্যতেল আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। অথচ গত অর্থ বছরে এ সময় আয় হয়েছিল ২ হাজার ৫ কোটি টাকা।

দেশের বাজারে এখন ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই। তারপরও সিন্ডিকেটের কবলে বাড়ছে দাম। অভিযোগ উঠেছে, গত চার মাসে এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের বাজার থেকে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, গেল ৪ মে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৯ টাকা বাড়িয়ে ১৭৬ টাকা আর প্রতি লিটার খোলা পাম তেল দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৫ টাকা।